জীবন টা একেক জনের দৃস্টিকোন থেকে একেক রকম! জীবনের অর্থ হয়তো আমি বুঝি সরল রেখায়, অন্য কেউ তা নাও বুঝতে পারেন! অনেকেই অনেক ভাবে জীবন কে উপলদ্বি করেন! কারো ভাবনার সাথে, কারো যোগসুত্র নেই!
আজ কেন জানি, হুমায়ুন স্যার এর ভুত চেপেছে মাথায় ! এই মহান ব্যাক্তি টি, কারো কারো অপ্রিয় ও হতে পারেন। আমার খুব প্রিয় একজন লেখক হুমায়ুন আহমেদ। তার অসংখ্য বই আমি পড়েছি ছোট্ট বেলায়। একটা সময় হিমুর খুব ভক্ত ছিলাম। আর বাস্তবে নিজেকে হিমু সাজানোর চেষ্টায় পকেট বিহীন সেই হলদে পাঞ্জাবি, খালি পা …… অদ্ভুত একটা অনুভুতি হত !
যাই হোক, এখন বড় হয়েছি । বুঝতে শিখেছি ! বাস্তবে হিমুর কোন অস্তিত্ব নেই । হিমু কেবল একটা মেটাফোর । একটা উদাহরন । একটু ভিন্ন ভাবে। হিমুর ভাবনা-চিন্তা, ওর সোজা সাপটা জবাব,জীবনকে এত সহজভাবে নিয়ে তাকে শাসন করার সাহস, সব কিছুই যেন এই সমাজের নিয়ম রীতিগুলোকে বদলে দেয়ার একটা ভিন্ন প্রয়াস । এই হিমু চরিত্রটা ছিল স্যার এর একটি প্রতিবাদী চরিত্র। সহজ ভাষায় তিনি অকপটে লিখে গেছেন মানুষের কথা, এই সমাজ ব্যাবস্থার পরিবর্তনের কথা, অবিচার, নিত্যদিনের ঘটে যাওয়া খন্ড চিত্র, আবেগ-অনুভুতি, মানুষের মনের সুপ্ত বাসনা, লুকায়িত কামনা, পাপবোধ, ও ব্যার্থতার কথা ! তার কোন লেখাতেই বিরক্তির উদ্রেক ঘটেনি। তিনি হিমু, রুপা, মিসির আলীর চরিত্র দিয়ে নানান ভাবে পাঠক কুলে একটা ভিন্ন পবিবেশ তৈরী করে গেছেন। তার হিমু কে নিয়ে লিখা বই গুলিতে, কাহিনী তেমন কিছুই নেই। নিত্যদিনের সমাচার, হতাশা, সমস্যাজর্জরিত সমাজ ও রাজনীতি, হাস্যকর মিডিয়া, আর স্বেচ্ছাচারিতাই বেশী। এই যে বাস্তবতা আর কুৎসিত জীবন শৃঙ্খলার মাঝে, একটা সামঞ্জস্য রক্ষা কর্রে, নিজের অবস্থান তৈরি করে নেয়া, এটার জন্যই হিমু আজ মানুষের মনে প্রানে। হিমুর বৈশিষ্ট্য এটাই । তার লিখা বুজতে হলে, পাঠক কুল কে, শুধু হিমুর মত হলদে পাঞ্জাবী পড়ে , খালি পায়ে হেটে বেড়ালেই হবেনা বা চাঁদনী রাতে জোছনার খুঁজে পথে বেরুলেই হবেনা। তার লিখা ও লিখার উদ্দেশ্য বুজতে হলে, পাঠক কে সিম্বলজি, ইংলিশ লিটারেসি, গ্রিক মিথলজি পড়তে হবে।
মন কে বুঝতে পেরেছে ক’জন! মনের গতি মানুষের নিয়ন্ত্রনের বাইরে! হুমায়ুন আহমেদ হয়তো নিজের মনের গভিরে পৌছুতে পারেন নি কখনো। আর তাইতো তিনি বলেছেন ” ঈশ্বর মানুষ কে প্রচুর ক্ষমতা দিয়েছেন, মনের কথা বুঝবার ক্ষমতা দেননি… “!
কখনো তার লিখায় উদাসীনতা লক্ষ্য করা যায়, কখনো বা জীবন টা সুন্দর! ভাবুক কবি তার সময়ে অসময়ে, তার একান্ত অনুভুতি গুলি ছুড়ে দিয়েছেন পাঠক হ্রিদয়ে! যখন তিনি বলতেন ” আদিগন্ত বিস্তৃত শূন্যতায় কি বিপুল বিষণ্ণতাই না অনুভব করি। জানালার ওপাশের অন্ধকার থেকে আমার সঙ্গীরা আমায় ডাকে। একদিন যাদের সঙ্গ পেয়ে আজ নিঃসঙ্গতায় ডুবছি …”, তখন একজন চির সুখি জন ও যেন নি:শ্বংগতায় ডুবে যেতেন। আবার তিনিই পাঠক কে হতাশা থেকে টেনে তুলে বলতেন, ” স্বপ্ন থাকা খুবই জরুরি…স্বপ্ন না থাকলে ভোরবেলায় ঘুম থেকে ওঠার কোনো মানেই হয় না…সারা জীবন শুয়ে থাকলেই তো হয়…”! তিনি যেন মানুষের প্রতিটা হ্রিদয়স্পন্দন শুনতে পারতেন! মানুষের ভাবনা গুলো নিয়ে খেলা যেন তার শখ এর আওতায় ছিল!
স্যার এর মৃত্যুর পর, তার প্রিয় ছেলে নুহাশ, মনের গভিরে লুকিয়ে থাকা কিছু না বলা কথা ব্যাক্ত করতে গিয়ে বলেছিলেন, ” তিনি আমাকে ভালোবাসতেন। আমি নিশ্চিত, ভালোবাসতেন। হয়তো তাঁর মনোযোগ অন্যত্র সরে গেছে, হয়তো সুখ খুঁজে পেয়েছিলেন তিনি, আর একা বোধ করেননি। কিন্তু এটা তো ঠিক যে কেউ কারও বিকল্প হতে পারে না। ভালোবাসা ফিরিয়ে নেওয়া যায় না।”…… এই লাইন গুলো যতবার পড়ি, ততবারঈ মনে হয়, বাবার প্রতি নুহাশ এর অভিযোগ বা অভিমান এর পরিমানটা অনেক থাকলেও, ভালবাসার পরিমান ছিল তার থেকেও বেশী। আর তাইতো, বাবার লাশ দাফন করতে একমাত্র ছেলে গিয়েছিল হলুদ পাঞ্জাবী গায়ে। বাবার কাল্পনিক চরিত্র হিমু সেঁজে! যেন কল্পনার হিমু সেবার সত্যিই বাস্তবে দেখা দিয়েছিল অন্তিম শয়নে শায়িত স্যার এর পাশে! ভালবাসা কম হলে, নুহাশ হিমু কে হাজার হাজার মানুষ দেখতো কি? স্যার ও হয়তো তা উপলদ্বি করতে পেরেছিলেন। তাইতো তিনি বলেছেন, ” “পৃথিবীতে অসংখ্য খারাপ মানুষ আছে কিন্তু একজনও খারাপ বাবা নাই।”!!!
তার ব্যাক্তিগত জীবন নিয়ে, অনেক প্রশ্ন পাঠকের মনে! আমার মনে কখন ও কোন প্রশ্নের উদয় হয়নি। হয়তো অন্ধ ভক্ত বলে! হয়তো বা তার লিখা, তার বিশেষ বিশেষ চরিত্র গুলো আমাকে প্রচন্ড ভাবে আলোরিত করে বলে! আমি স্যার কে ভালবাসি একজন প্রতিভাবান লেখন হিসাবে, যার লিখায় ফুটে উঠে সাধারন মানুষের দৈনন্দিন বেঁচে থাকার লড়াই। ফুটে উঠে সমাজের বিসৃংখলতা আর বৈষম্য! ফুটে উঠে মধ্যবিত্যের আশা আকাংক্ষা, বেকার যুবকের উদাসিনতা আর ষোড়শীর অপ্রাপ্ত বয়সের কিছু ভয়ঙ্কর সপ্ন!
আমি তার ব্যাক্তিগত জীবন নিয়ে সমালোচনা করার কে? করতেও চাইনা! হুমায়ুন স্যার আমার হ্রিদয়ে বেঁচে থাকবেন আমৃত্যু!
ডার্ক এভিল
প্রবাহমান জীবন ও কিছু কথা! পর্ব ৫
Published by HB Rita on Saturday, May 3rd, 2014