
গত সপ্তাহ যে কিশোরটি আত্ব্যহত্বা করেছে তার নাম আরাফাত শাওন। এসএসসি পরীক্ষায় A+ না পাওয়ায় অপরাধে বাবা মায়ের তিরস্কার সইতে না পেরে এক বুক অভিমান বুকে চিরবিদায় নিলেন পরিবার পরিজনদের কাছ থেকে। যাওয়ার আগে মা-বাবার প্রতি সমস্ত অভিমানের বর্ননা দিয়ে লিখে গেছেন এক মর্মান্তিক চিঠি।
এ নতুন কিছু নয়। আমাদের দেশে প্রতি এসএসসি/এইসএসসি রেজাল্ট বের হওয়ার পর পরই এমন সংবাদ পাওয়া যায়।
রেজাল্ট আশানুরুপ হয়নি। মা-বাবার সকল আর্থিক, শারীরিক ও মানসিক শ্রম ব্যার্থ। বকাঝকা তো করবেই। এভাবেই চলে আসছে পারিবারিক বিষয় গুলি। তাতে আত্ব্যহত্তা করতে হবে কেন?
এমনই সাধারনত অনেকের মন্তব্য হয়ে থাকে।
সমস্যাটা তাহলে কোথায়?
প্রতিটি মা-বাবাই তার সন্তানকে ভালবাসে। আর ভালবাসে বলেই এত ত্যাগ তিতিক্ষার পর সন্তানকে নিজ দায়ীত্বে বড় করে তুলে।
তবে বিভিন্ন সংস্কর্তি, সামাজিক রীতি, পারিবারীক প্রথা ও ধর্মীয় রীতি অনুযায়ী, সেই ভালবাসাটা বিভিন্ন রুপে সন্তানের উপর প্রতিফলন হয়। কখনো সেটা সঠিক। কখনো সেটা হয় ভুল।
parenting styles have an important influence on a child’s physical,mental and cognitive development.
সন্তানের সঠিক পরিচর্যায় পেরেন্টিং স্টাইল অনস্বীকার্য।
পেরেন্টিং স্টাইল কি?
পেরেন্টিং স্টাইল হচ্ছে এমন একটি স্ট্যান্ডার্ড কৌশল ( psychological construct ),যা মা-বাবা তাদের সন্তানকে লালন-পালন করতে ব্যাবহার করে থাকেন।
প্রয়োজনমত আদর ভালবাসা ও শাসন ব্যালেন্স রেখে, সন্তানের ভাল-মন্দ, ইচ্ছা-অনিচ্ছাকে প্রাধান্য দেয়া এবং তাদের প্রতি সব ধরনের দায়ীত্ব যথাযথ পালন করাকেই মুলত পেরেন্টিং স্টাইল বলে।
পেরেন্টিং স্টাইল ৪ প্রকার।
১। অথরিটেরিয়ান
২। অথরিটেটিভ
৩।পার্মেসিভ
এবং
৪। আন-ইনভল্ভড পেরেন্টিং।
********************************** অথরিটেরিয়ান পেরেন্টিংঃ এই পেরেন্টিং স্টাইলে দেখা যায় মা-বাবাই সন্তানের জন্য যাবতীয় নিয়ম-কানুন ও নির্দিষ্ট সাফল্য নির্ধারন করে থাকেন। এখানে সন্তানের পছন্দ-অপছন্দ, ইচ্ছে-অনিচ্ছার তেমন কোন প্রাধান্য নেই।
সন্তান কি খাবে, কি পরিধান করবে, কার সাথে মিশবে, এবং বড় হয়ে সে কি হতে চায়, সব মা-বাবাই নির্ধারন করেন। সন্তান যদি কোন একশনের কারন জানতে চায়, তাহলে মা-বাবার উত্তর হবেঃ ” আমি বলেছি তাই করতে হবে/ কিংবা আমি তোর গার্ডিয়ান, যা বলব তাই শুনবি”…! এই পেরেন্টিং এ, সন্তানকে কোন ধরনের পছন্দ দেয়া হয়না; একচ্ছত্রভাবে মা-বাবাই নির্ধারন করেন তার সকল একশন। এই জাতীয় মা-বাবারা অনেক সময় সন্তানের ভুলের জন্য তাকে শাস্তি দিয়ে দিয়ে থাকেম। যেমনঃ চর-থাপ্পর, ঝাকুনী, বেত্রাঘাত, কটু ভাষায় তিরস্কার, খাবার না দেয়া, প্রিয় কাজটি করতে না দেয়া।
পরিনামঃ
-এতে করে সন্তানের আত্ববিশ্বাস কমে যেতে পারে।
-সন্তানটি হতাশায় ভুগতে পারেন।
-মা-বাবার প্রতি অশ্রদ্বাশীল হয়ে উঠতে পারেন।
– সিদ্বান্ত তৈরী ও সমস্যা সমাধানে হিমশিম খেতে পারেন।
-মানসিক সঠিক বিকাশ ব্যাহত হতে পারে।
– শারীরিক শাস্তির কারনে, মানসিক, শারীরিক ও নিউরোলজিক্যাল সমস্যার তৌরী হতে পারে।
********************************** অথরিটেটিভ পেরেন্টিংঃ এই পেরেন্টিং স্টাইলে মা-বাবা সাধারনত সন্তানের জন্য নিয়মাবলী ও লক্ষ্য নির্ধারন করলেও, সেটা কেন করেছেন এবং তার সুফল/ কুফল কি হতে পারে, তা সন্তানকে ব্যাখা করে থাকেন। অর্থাৎ মা-বাবা এখানে সন্তানকে নিয়ন্ত্রন করেন ঠিকই তবে তাদের উপর কোন কিছু একচ্ছত্রভাবে চাপিয়ে না দিয়ে সন্তানের ইচ্ছা-অনিচ্ছার প্রাধান্য দেন এবং মা-বাবার নির্ধারিত প্রতিটি একশনের পিছনে যথার্থ কারন নিয়ে সন্তানের সাথে আলোচনা করেন। এই পদ্বতিতে, মা-বাবা সন্তানকে তার ভুলের জন্য শাস্তির চাইতে, ফলাফল কি হতে পারে তা নিয়ে আলোচনা করে বুঝান।
যেমনঃ সন্তান পরীক্ষায় ফেইল করলো। মা-বাবা তাকে গালি বা কটাক্ষ না করে,অন্যের সাথে সন্তানকে তুলনা না করে, কিভাবে আরো ভাল করা যায় তা নিয়ে উৎসাহ দিবেন এবং তার পাস করা কতটা জররী তার ভবিষ্যত ও মা-বাবার আশা পুরনে, তা নিয়ে পসিটিভলি সন্তানের সাথে আলোচনা করবেন।
যেমনঃ আপনার মেয়ে সন্তানকে রাত ৮ টার পর বাহিরে যেতে মানা করেছেন। সে আপনাকে জিজ্ঞেস করলো কেন সে রাত ৮ টার পর বাহিরে যেতে পারবেনা?
মা-বাবা তাকে ” তুমি মেয়ে তাই সন্দ্ব্যার পর বাহিরে যাওয়া ঠিক না” এই কথাটি না বলে, সন্দ্ব্যার পর একা বাহিরে গেলে কি কি সমস্যা ফেইস করতে হতে পারে এবং যদি পাশে আপন কেউ না থাকে তাহলে কতটা ভয়াবহ বিপদ হতে পারে, তা ব্যাখা করেন। এতে করে মেয়ে হিসাবে সন্তানটির কোন আক্ষেপ থাকেনা এবং তার ভবিষ্যত পদক্ষেপ সতর্ক হয়।
এই পদ্বতিতে ফেইলিউর সন্তানের আগ্রহ বাড়াতে, মা-বাবা শাস্তির পরিবর্তে, অনেক সময় রি-ইনফর্স্মেন্টের ব্যাবস্থা করে থাকেন।
যেমনঃ সন্তান যদি নির্ধারিত লক্ষ্যে পৌছাতে পারে, তাহলে হয়তো তার প্রিয় খাবার/ টয়/ বস্তুটি পুরস্কার হিসাবে পাবে।
বিভিন্ন গবেষনায় দেখা গেছে, স্কুল থেকে শুরু করে পরিবারিক শাসনেও, অথরিটেটিভ পেরেন্টিং এ, ছেলে-মেয়েরা সফলতা বেশী অর্জন করে।
পরিনামঃ
– ব্যাক্তি জীবনে সাফল্য
-আত্বিবিশ্বাস বৃদ্বি
-দৃঢ় মনোবল
– একাডেমিক সাফল্য
– ভাল-মন্দের পার্থক্য নির্নয়
– সঠিক সিদ্বান্ত নেওয়ায় একাগ্রতা
************************************* পার্মেসিভ পেরেন্টিংঃ এই পেরেন্টিং পদ্বতিতে, মা- বাবা সাধারনত সন্তানের সাথে বন্দ্বুত্বপুর্ন সম্পর্ক গড়ে তুলেন ঠিকি, কিন্তু এখানে সঠিক শাসন বা নিয়মাবলীতে ঘাটকি থাকে। সন্তান ফেইলিউর হলে মা-বাবা তাকে শাস্তি দেন; তবে সন্তানকে সফল করে তুলতে কোন পদক্ষেপ নেন না।
যতক্ষন পর্যন্ত সন্তান কোন বড় ধরনের ভুল করে না বসবে, ততক্ষন পর্যন্ত মা-বাবা নাক গলান না। আর ভুল করে বসলেও শাস্তি আছে, সে ভুল যেন আর হয়, তার পক্ষে কোন পদক্ষেপ নেই মা-বাবার।
পরিনামঃ
-বিগড়ে যাওয়া / বেয়াদব
– সামাজিক নিয়ম ভঙ্গ করা
– স্বাচ্ছাচারি
-আত্ব-বিশ্বাসের ঘাটতি
– স্কুলে খারাপ রেজাল্ট করা
*********************************** আন-ইনভল্ভড পেরেন্টিংঃ
এই পেরেন্টিং পদ্বতিতে সাধারনত মা-বাবা সন্তানের প্রতি অবহেলা প্রদর্শন করে থাকেন। তারা সন্তানের চাহিদা পুরনে ব্যর্থ। কিন্তু সন্তানের কাছে তাদের আশানুরুপ সাফল্য আশা করতে ছাড়েন না। সন্তান স্কুলে ঠিকমত গেলো গেল কিনা, নাকি স্কুল ফাঁকি দিচ্ছে, হোমোয়ার্ক করলো কিনা, কোন কারনে আপ্সেট কিনা, খেতে চাচ্ছেনা বলে ভিন্ন কিছু খেতে অফার করা ইত্যাদি ইত্যাদি……………।। অর্থাৎ সঠিক পরিচর্যা ও গাইডেন্সের অভাব।
গবেষনায় দেখা গেছে, এডিকশন, দারিদ্রতা, অশিক্ষা, এ ধরনের পেরেন্টিং এর জন্য দায়ী।
পরিনামঃ
– দুর্বল মনোবল
– হতাশা
– রাগ বেড়ে যাওয়া
– অসামাজিক আচরন বৃদ্বি পাওয়া
-নিজের উপর নিয়ন্ত্রন হারিইয়ে ফেলা
-একাডেমিক সাফল্যে চরম ব্যার্থতা
উপরে উল্লেখিত কোন পেরেন্টিং স্টাইলটি আপনার ও আপনার সন্তানের জন্য উপযুক্ত, এবার সেটি আপনি নিজে নির্ধারন করুন।
***********************************************************************************
সন্তানের সঠিক পরিচর্যায় মা-বাবার যা করনীয়ঃ
– সন্তান পরিচর্যা ও লালন-পালনে মা-বাবার ভুমিকা অপরিসীম । সন্তানকে শাসন করুন, তার ভবিশ্যত পরিকল্পনায় তাকে নিয়মাবলী দ্বারা গাইড করুন। কিন্তু মনে রাখবেন, সন্তান যেন আপনার সাথে একজন শাসকের দৃস্টিতে না দেখে, সন্তান যেন আপনার কাছে নিরাপদ ও স্বস্থি ফিল করে।
– সন্তানের পরিচর্যায়, তার জন্য কিছুটা স্পেইস রাখুন। তাকে বলতে দিন। আপনি শুনুন। তার চাহিদায় ভুল থাকলে , সেটা তাকে বুঝিয়ে বলুন। ভালো কিছু আইডিয়া থাকলে, সন্তানকে প্রশংসা করতে ভুলবেন না।
– দৈনিক কিছুটা সময় দিন সন্তানকে । মোবাইল নিয়ে ব্যাস্ত না থেকে, টিভি সিরিয়ালে সময় ব্যয় না করে, সন্তানের পাশে বসুন। সে কেমন ফিল করছে, স্কুলে আজ মজার বা তিক্ততার কিছু ঘঠেছে কিনা, ইত্যাদি নিয়ে গল্প করুন। মাঝে মাঝে সন্তানকে নিয়ে আচমকা কোথাও খেতে বা বেড়াতে চলে যান। সন্তানের সাথে খেলুন। বাড়তি কিছু আনন্দ দিয়ে সন্তানের ” বেস্ট ফ্রেন্ড” লিস্টে জায়গা করে নিন। কোন ভুল করেও যেন সে বাহিরে সমাধান না করে, আপনার কাছে আসে। এবং আপনি তার সেই ভুল শোধরাতে সক্ষম হন।
– সন্তানের মেধা কোথায়? খুঁজে দেখুন। আপনার সন্তান যদি স্পোর্টস এ যথেস্ট পরিমান মেধা নিয়ে জন্মে থাকে, তাহলে তাকে ডাক্টার বানানোর বৃথা চেস্টা করে লাভ নেই। মেধা সৃস্টিকর্তার দান। বরং জোরপুর্বক তার উপর নির্দিষ্ট লক্ষ্য চাপিয়ে দেওায়, তার কেরিয়ার হুমকির সন্মুক্ষীন হবে। সন্তানের আকর্ষন কিসে জানুন। যদি সেটা খুনী/ ডাকাত বা চোর পর্যায়ের না হয়, তাহলে সন্তানের চাহিদাতেই তার ভবিষ্যৎ লক্ষ্য নির্ধারন করার চেষ্টা করুন।
– সন্তানকে কোন বিধি-নিষেদ নির্ধারন করে দিয়ে, সেটার কারন ও তাকে ব্যাখা করুন। তাহলে ভাল-মন্দের পার্থক্য ও ফলাফলটাও তার কাছে পরিস্কার হবে। পরবর্তিতে সঠিক সিদ্বান্ত নিতে সাহায্য করবে। কিন্তু তা না করে যদি আপনি তাকে কেবল গার্জিয়ান হওয়ার সুবাদেই যা বলেছেন তা শুনতে হবে বা মানতে হবে বলে দাবী করেন, তাহলে আপনার সন্তান আপনার প্রতি শ্রদ্ব্যা হারিয়ে ফেলবে। সেই সাথে সন্তানের আত্ববিশ্বাস কমে যাবে।
– সন্তান পরীক্ষায় ফেইল করলে, কোন অপরাধ করলে, কিংবা আপনার আশানুরুপ সাফল্য অর্জন করতে না পারলে, তাকে মার-ধর, তিরস্কার বা গালাগালি না করে,তার ব্যার্থতার কারন গুলি ধরিয়ে দিন এবং তাকে পরবর্তি সাফল্যের জন্য উৎসাহ দিন।
– সন্তান কে কখনোই ঝাকুনি, বেত্রাঘাত বা চর-লাথি দিবেন না। এতে করে আপনার সন্তানের শারীরিক ও মানসিক অনেক সমস্যার তৈরী হতে পারে।
যেমনঃ
১। রাগ, হিংস্রতা, একরোখা স্বভাব বেড়ে যাওয়া
২। অসামাজিক ও বিদ্বেষী হয়ে উঠা
৩। আত্ববিশ্বাস দুর্বল হয়ে যাওয়া
৪। মস্তিস্ক বিকৃত ও চোখের জ্যোতি নষ্ট হওয়া
৫। সম্পর্ক এবং অন্যের প্রতি বিশ্বাস নষ্ট হওয়া
৬। হতাশা
৭। বুদ্বিবৃত্তি কমে যাওয়া
৮। অতিমাত্রায় ভয় থেকে তোতলা হয়ে যাওয়া
৯। একাডেমিক্যালি অসফলতা।
সর্বপোরি, সন্তানটি আপনার। কালো- খুঁড়া , ভাল- খারাপ যাই হোক, সে একান্তই আপনার। নিজের একটু হেয়ালীর কারনে, সন্তানটিকে একজন সুস্থ্য, দায়ীত্বশীল ও মানবিক নাগরিক হিসাবে বেড়ে উঠার সুযোগ থেকে বঞ্চিত করবেন না।
এমন না হয়, সন্তানটি নেশাগ্রস্থ্য হয়ে পড়লো আপনার দৃষ্টির অগোচরে। কিংবা ব্যার্থতার তিরস্কার সইতে না পেরে আরাফাত শাওনের মত এক বুক অভিমান বুকে অকালেই আপনার বুক খালি করে চলে গেলো!
_——————————————– ডার্ক এভিল
পেরেন্টিং স্টাইল
গত সপ্তাহ যে কিশোরটি আত্ব্যহত্বা করেছে তার নাম আরাফাত শাওন। এসএসসি পরীক্ষায় A+ না পাওয়ায় অপরাধে বাবা মায়ের তিরস্কার সইতে না পেরে এক বুক অভিমান বুকে চিরবিদায় নিলেন পরিবার পরিজনদের কাছ থেকে। যাওয়ার আগে মা-বাবার প্রতি সমস্ত অভিমানের বর্ননা দিয়ে লিখে গেছেন এক মর্মান্তিক চিঠি।
এ নতুন কিছু নয়। আমাদের দেশে প্রতি এসএসসি/এইসএসসি রেজাল্ট বের হওয়ার পর পরই এমন সংবাদ পাওয়া যায়।
রেজাল্ট আশানুরুপ হয়নি। মা-বাবার সকল আর্থিক, শারীরিক ও মানসিক শ্রম ব্যার্থ। বকাঝকা তো করবেই। এভাবেই চলে আসছে পারিবারিক বিষয় গুলি। তাতে আত্ব্যহত্তা করতে হবে কেন?
এমনই সাধারনত অনেকের মন্তব্য হয়ে থাকে।
সমস্যাটা তাহলে কোথায়?
প্রতিটি মা-বাবাই তার সন্তানকে ভালবাসে। আর ভালবাসে বলেই এত ত্যাগ তিতিক্ষার পর সন্তানকে নিজ দায়ীত্বে বড় করে তুলে।
তবে বিভিন্ন সংস্কর্তি, সামাজিক রীতি, পারিবারীক প্রথা ও ধর্মীয় রীতি অনুযায়ী, সেই ভালবাসাটা বিভিন্ন রুপে সন্তানের উপর প্রতিফলন হয়। কখনো সেটা সঠিক। কখনো সেটা হয় ভুল।
parenting styles have an important influence on a child’s physical,mental and cognitive development.
সন্তানের সঠিক পরিচর্যায় পেরেন্টিং স্টাইল অনস্বীকার্য।
পেরেন্টিং স্টাইল কি?
পেরেন্টিং স্টাইল হচ্ছে এমন একটি স্ট্যান্ডার্ড কৌশল ( psychological construct ),যা মা-বাবা তাদের সন্তানকে লালন-পালন করতে ব্যাবহার করে থাকেন।
প্রয়োজনমত আদর ভালবাসা ও শাসন ব্যালেন্স রেখে, সন্তানের ভাল-মন্দ, ইচ্ছা-অনিচ্ছাকে প্রাধান্য দেয়া এবং তাদের প্রতি সব ধরনের দায়ীত্ব যথাযথ পালন করাকেই মুলত পেরেন্টিং স্টাইল বলে।
পেরেন্টিং স্টাইল ৪ প্রকার।
১। অথরিটেরিয়ান
২। অথরিটেটিভ
৩।পার্মেসিভ
এবং
৪। আন-ইনভল্ভড পেরেন্টিং।
********************************** অথরিটেরিয়ান পেরেন্টিংঃ এই পেরেন্টিং স্টাইলে দেখা যায় মা-বাবাই সন্তানের জন্য যাবতীয় নিয়ম-কানুন ও নির্দিষ্ট সাফল্য নির্ধারন করে থাকেন। এখানে সন্তানের পছন্দ-অপছন্দ, ইচ্ছে-অনিচ্ছার তেমন কোন প্রাধান্য নেই।
সন্তান কি খাবে, কি পরিধান করবে, কার সাথে মিশবে, এবং বড় হয়ে সে কি হতে চায়, সব মা-বাবাই নির্ধারন করেন। সন্তান যদি কোন একশনের কারন জানতে চায়, তাহলে মা-বাবার উত্তর হবেঃ ” আমি বলেছি তাই করতে হবে/ কিংবা আমি তোর গার্ডিয়ান, যা বলব তাই শুনবি”…! এই পেরেন্টিং এ, সন্তানকে কোন ধরনের পছন্দ দেয়া হয়না; একচ্ছত্রভাবে মা-বাবাই নির্ধারন করেন তার সকল একশন। এই জাতীয় মা-বাবারা অনেক সময় সন্তানের ভুলের জন্য তাকে শাস্তি দিয়ে দিয়ে থাকেম। যেমনঃ চর-থাপ্পর, ঝাকুনী, বেত্রাঘাত, কটু ভাষায় তিরস্কার, খাবার না দেয়া, প্রিয় কাজটি করতে না দেয়া।
পরিনামঃ
-এতে করে সন্তানের আত্ববিশ্বাস কমে যেতে পারে।
-সন্তানটি হতাশায় ভুগতে পারেন।
-মা-বাবার প্রতি অশ্রদ্বাশীল হয়ে উঠতে পারেন।
– সিদ্বান্ত তৈরী ও সমস্যা সমাধানে হিমশিম খেতে পারেন।
-মানসিক সঠিক বিকাশ ব্যাহত হতে পারে।
– শারীরিক শাস্তির কারনে, মানসিক, শারীরিক ও নিউরোলজিক্যাল সমস্যার তৌরী হতে পারে।
********************************** অথরিটেটিভ পেরেন্টিংঃ এই পেরেন্টিং স্টাইলে মা-বাবা সাধারনত সন্তানের জন্য নিয়মাবলী ও লক্ষ্য নির্ধারন করলেও, সেটা কেন করেছেন এবং তার সুফল/ কুফল কি হতে পারে, তা সন্তানকে ব্যাখা করে থাকেন। অর্থাৎ মা-বাবা এখানে সন্তানকে নিয়ন্ত্রন করেন ঠিকই তবে তাদের উপর কোন কিছু একচ্ছত্রভাবে চাপিয়ে না দিয়ে সন্তানের ইচ্ছা-অনিচ্ছার প্রাধান্য দেন এবং মা-বাবার নির্ধারিত প্রতিটি একশনের পিছনে যথার্থ কারন নিয়ে সন্তানের সাথে আলোচনা করেন। এই পদ্বতিতে, মা-বাবা সন্তানকে তার ভুলের জন্য শাস্তির চাইতে, ফলাফল কি হতে পারে তা নিয়ে আলোচনা করে বুঝান।
যেমনঃ সন্তান পরীক্ষায় ফেইল করলো। মা-বাবা তাকে গালি বা কটাক্ষ না করে,অন্যের সাথে সন্তানকে তুলনা না করে, কিভাবে আরো ভাল করা যায় তা নিয়ে উৎসাহ দিবেন এবং তার পাস করা কতটা জররী তার ভবিষ্যত ও মা-বাবার আশা পুরনে, তা নিয়ে পসিটিভলি সন্তানের সাথে আলোচনা করবেন।
যেমনঃ আপনার মেয়ে সন্তানকে রাত ৮ টার পর বাহিরে যেতে মানা করেছেন। সে আপনাকে জিজ্ঞেস করলো কেন সে রাত ৮ টার পর বাহিরে যেতে পারবেনা?
মা-বাবা তাকে ” তুমি মেয়ে তাই সন্দ্ব্যার পর বাহিরে যাওয়া ঠিক না” এই কথাটি না বলে, সন্দ্ব্যার পর একা বাহিরে গেলে কি কি সমস্যা ফেইস করতে হতে পারে এবং যদি পাশে আপন কেউ না থাকে তাহলে কতটা ভয়াবহ বিপদ হতে পারে, তা ব্যাখা করেন। এতে করে মেয়ে হিসাবে সন্তানটির কোন আক্ষেপ থাকেনা এবং তার ভবিষ্যত পদক্ষেপ সতর্ক হয়।
এই পদ্বতিতে ফেইলিউর সন্তানের আগ্রহ বাড়াতে, মা-বাবা শাস্তির পরিবর্তে, অনেক সময় রি-ইনফর্স্মেন্টের ব্যাবস্থা করে থাকেন।
যেমনঃ সন্তান যদি নির্ধারিত লক্ষ্যে পৌছাতে পারে, তাহলে হয়তো তার প্রিয় খাবার/ টয়/ বস্তুটি পুরস্কার হিসাবে পাবে।
বিভিন্ন গবেষনায় দেখা গেছে, স্কুল থেকে শুরু করে পরিবারিক শাসনেও, অথরিটেটিভ পেরেন্টিং এ, ছেলে-মেয়েরা সফলতা বেশী অর্জন করে।
পরিনামঃ
– ব্যাক্তি জীবনে সাফল্য
-আত্বিবিশ্বাস বৃদ্বি
-দৃঢ় মনোবল
– একাডেমিক সাফল্য
– ভাল-মন্দের পার্থক্য নির্নয়
– সঠিক সিদ্বান্ত নেওয়ায় একাগ্রতা
************************************* পার্মেসিভ পেরেন্টিংঃ এই পেরেন্টিং পদ্বতিতে, মা- বাবা সাধারনত সন্তানের সাথে বন্দ্বুত্বপুর্ন সম্পর্ক গড়ে তুলেন ঠিকি, কিন্তু এখানে সঠিক শাসন বা নিয়মাবলীতে ঘাটকি থাকে। সন্তান ফেইলিউর হলে মা-বাবা তাকে শাস্তি দেন; তবে সন্তানকে সফল করে তুলতে কোন পদক্ষেপ নেন না।
যতক্ষন পর্যন্ত সন্তান কোন বড় ধরনের ভুল করে না বসবে, ততক্ষন পর্যন্ত মা-বাবা নাক গলান না। আর ভুল করে বসলেও শাস্তি আছে, সে ভুল যেন আর হয়, তার পক্ষে কোন পদক্ষেপ নেই মা-বাবার।
পরিনামঃ
-বিগড়ে যাওয়া / বেয়াদব
– সামাজিক নিয়ম ভঙ্গ করা
– স্বাচ্ছাচারি
-আত্ব-বিশ্বাসের ঘাটতি
– স্কুলে খারাপ রেজাল্ট করা
*********************************** আন-ইনভল্ভড পেরেন্টিংঃ
এই পেরেন্টিং পদ্বতিতে সাধারনত মা-বাবা সন্তানের প্রতি অবহেলা প্রদর্শন করে থাকেন। তারা সন্তানের চাহিদা পুরনে ব্যর্থ। কিন্তু সন্তানের কাছে তাদের আশানুরুপ সাফল্য আশা করতে ছাড়েন না। সন্তান স্কুলে ঠিকমত গেলো গেল কিনা, নাকি স্কুল ফাঁকি দিচ্ছে, হোমোয়ার্ক করলো কিনা, কোন কারনে আপ্সেট কিনা, খেতে চাচ্ছেনা বলে ভিন্ন কিছু খেতে অফার করা ইত্যাদি ইত্যাদি……………।। অর্থাৎ সঠিক পরিচর্যা ও গাইডেন্সের অভাব।
গবেষনায় দেখা গেছে, এডিকশন, দারিদ্রতা, অশিক্ষা, এ ধরনের পেরেন্টিং এর জন্য দায়ী।
পরিনামঃ
– দুর্বল মনোবল
– হতাশা
– রাগ বেড়ে যাওয়া
– অসামাজিক আচরন বৃদ্বি পাওয়া
-নিজের উপর নিয়ন্ত্রন হারিইয়ে ফেলা
-একাডেমিক সাফল্যে চরম ব্যার্থতা
উপরে উল্লেখিত কোন পেরেন্টিং স্টাইলটি আপনার ও আপনার সন্তানের জন্য উপযুক্ত, এবার সেটি আপনি নিজে নির্ধারন করুন।
***********************************************************************************
সন্তানের সঠিক পরিচর্যায় মা-বাবার যা করনীয়ঃ
– সন্তান পরিচর্যা ও লালন-পালনে মা-বাবার ভুমিকা অপরিসীম । সন্তানকে শাসন করুন, তার ভবিশ্যত পরিকল্পনায় তাকে নিয়মাবলী দ্বারা গাইড করুন। কিন্তু মনে রাখবেন, সন্তান যেন আপনার সাথে একজন শাসকের দৃস্টিতে না দেখে, সন্তান যেন আপনার কাছে নিরাপদ ও স্বস্থি ফিল করে।
– সন্তানের পরিচর্যায়, তার জন্য কিছুটা স্পেইস রাখুন। তাকে বলতে দিন। আপনি শুনুন। তার চাহিদায় ভুল থাকলে , সেটা তাকে বুঝিয়ে বলুন। ভালো কিছু আইডিয়া থাকলে, সন্তানকে প্রশংসা করতে ভুলবেন না।
– দৈনিক কিছুটা সময় দিন সন্তানকে । মোবাইল নিয়ে ব্যাস্ত না থেকে, টিভি সিরিয়ালে সময় ব্যয় না করে, সন্তানের পাশে বসুন। সে কেমন ফিল করছে, স্কুলে আজ মজার বা তিক্ততার কিছু ঘঠেছে কিনা, ইত্যাদি নিয়ে গল্প করুন। মাঝে মাঝে সন্তানকে নিয়ে আচমকা কোথাও খেতে বা বেড়াতে চলে যান। সন্তানের সাথে খেলুন। বাড়তি কিছু আনন্দ দিয়ে সন্তানের ” বেস্ট ফ্রেন্ড” লিস্টে জায়গা করে নিন। কোন ভুল করেও যেন সে বাহিরে সমাধান না করে, আপনার কাছে আসে। এবং আপনি তার সেই ভুল শোধরাতে সক্ষম হন।
– সন্তানের মেধা কোথায়? খুঁজে দেখুন। আপনার সন্তান যদি স্পোর্টস এ যথেস্ট পরিমান মেধা নিয়ে জন্মে থাকে, তাহলে তাকে ডাক্টার বানানোর বৃথা চেস্টা করে লাভ নেই। মেধা সৃস্টিকর্তার দান। বরং জোরপুর্বক তার উপর নির্দিষ্ট লক্ষ্য চাপিয়ে দেওায়, তার কেরিয়ার হুমকির সন্মুক্ষীন হবে। সন্তানের আকর্ষন কিসে জানুন। যদি সেটা খুনী/ ডাকাত বা চোর পর্যায়ের না হয়, তাহলে সন্তানের চাহিদাতেই তার ভবিষ্যৎ লক্ষ্য নির্ধারন করার চেষ্টা করুন।
– সন্তানকে কোন বিধি-নিষেদ নির্ধারন করে দিয়ে, সেটার কারন ও তাকে ব্যাখা করুন। তাহলে ভাল-মন্দের পার্থক্য ও ফলাফলটাও তার কাছে পরিস্কার হবে। পরবর্তিতে সঠিক সিদ্বান্ত নিতে সাহায্য করবে। কিন্তু তা না করে যদি আপনি তাকে কেবল গার্জিয়ান হওয়ার সুবাদেই যা বলেছেন তা শুনতে হবে বা মানতে হবে বলে দাবী করেন, তাহলে আপনার সন্তান আপনার প্রতি শ্রদ্ব্যা হারিয়ে ফেলবে। সেই সাথে সন্তানের আত্ববিশ্বাস কমে যাবে।
– সন্তান পরীক্ষায় ফেইল করলে, কোন অপরাধ করলে, কিংবা আপনার আশানুরুপ সাফল্য অর্জন করতে না পারলে, তাকে মার-ধর, তিরস্কার বা গালাগালি না করে,তার ব্যার্থতার কারন গুলি ধরিয়ে দিন এবং তাকে পরবর্তি সাফল্যের জন্য উৎসাহ দিন।
– সন্তান কে কখনোই ঝাকুনি, বেত্রাঘাত বা চর-লাথি দিবেন না। এতে করে আপনার সন্তানের শারীরিক ও মানসিক অনেক সমস্যার তৈরী হতে পারে।
যেমনঃ
১। রাগ, হিংস্রতা, একরোখা স্বভাব বেড়ে যাওয়া
২। অসামাজিক ও বিদ্বেষী হয়ে উঠা
৩। আত্ববিশ্বাস দুর্বল হয়ে যাওয়া
৪। মস্তিস্ক বিকৃত ও চোখের জ্যোতি নষ্ট হওয়া
৫। সম্পর্ক এবং অন্যের প্রতি বিশ্বাস নষ্ট হওয়া
৬। হতাশা
৭। বুদ্বিবৃত্তি কমে যাওয়া
৮। অতিমাত্রায় ভয় থেকে তোতলা হয়ে যাওয়া
৯। একাডেমিক্যালি অসফলতা।
সর্বপোরি, সন্তানটি আপনার। কালো- খুঁড়া , ভাল- খারাপ যাই হোক, সে একান্তই আপনার। নিজের একটু হেয়ালীর কারনে, সন্তানটিকে একজন সুস্থ্য, দায়ীত্বশীল ও মানবিক নাগরিক হিসাবে বেড়ে উঠার সুযোগ থেকে বঞ্চিত করবেন না।
এমন না হয়, সন্তানটি নেশাগ্রস্থ্য হয়ে পড়লো আপনার দৃষ্টির অগোচরে। কিংবা ব্যার্থতার তিরস্কার সইতে না পেরে আরাফাত শাওনের মত এক বুক অভিমান বুকে অকালেই আপনার বুক খালি করে চলে গেলো!
Published by HB Rita on Saturday, June 6th, 2015