মস্তিস্কের বিকৃত ভাবনা

10593209_594424354013496_380126453271171608_nমাঝে মাঝে কেন এমন হয়? মনে হয় যেন অস্থিরতায় পৃথিবী ছেঁয়ে আছে! যেদিকেই পা ফেলি, দুর্গম শক্ত জমিন। কঠিন তাপে যেন পা পুড়ে যায়! কঠোরতায় যেন নিঃশ্বাস নেয়া দায়।
লোকালয়ের ভিরে ফিসফিস কিছু একটা কান অবধি পৌছায়। কারা যেন আমায় নিয়ে গুনগুন করেই যাচ্ছে। ভয়ে নিজেকে গুটিয়ে ফেলি। কারো চোখের দিকে দৃষ্টিপাত করতে দ্বিধা হয়।
দিনের আলো অসহ্য লাগে। রাতের আঁধার হয় আরো ভয়াবহ। নিঁশুতি রাতে প্রায়ই ঘুম ভেংগে যায়া। মনে হয় কি যেন চেপে আছে ঠিক বুকের মধ্যিখানে। ছটফটিয়ে উঠি। ক্লান্তিতে চোখের পাতায় ঘুম পরীরা নেচে যায়। তবু জেগে থাকি। এক এক করে অতীত, বর্তমান তেড়ে আসে আমার সন্মুখে। ওরা হিসেব চায়। পাওয়া না পাওয়ার হিসেব। আমি কিছুতেই হিসেব মিলাতে পারিনা। সব কেমন তালগুল পাকিয়ে যায়।
অতঃপর, ওরা আমায় কটাক্ষ করে। তীব্র ঘৃণায় যাতনা ছুঁড়ে দেয় আমার মুখে। আমি সেই যাতনা দুই হাতে কুড়িয়ে নেই। যাতনারা ছড়িয়ে পড়ে আমার সর্বাঙ্গে। বিষে বিষে আমি নীল হতে কালো বর্নে রুপান্তরিত হই। এক সময় যাতনারা আমার চোখে ভর করে। দেখি, অনবরত কষ্ট নড়ে আমার চোখের ভিতর।
অসহনীয় জ্বালায় আমি ঘর ছেড়ে বেড়িয়ে পরি। মাইলের পর মাইল উদ্ভ্রান্তের মত হেঁটে যাই। পথের বাঁকে যা পাই সব লাথি মেরে সরিয়ে দেই। মনে হয়, জীবনের কন্টকময় পথে যদি সব বিভ্রান্তিগুলোকে ঠিক এমন করে সরিয়ে দেয়া যেত! পৃথিবীর যান্ত্রিক শব্দে বিরক্ত লাগে।
আবার ফিরে আসি নিজ ঠিকানায়। এবার মনে হয় ডুব দেই স্মৃতির তলে। কিছু বিমূর্ত স্মৃতির পাতা ঘেঁটে ঘেঁটে বের করি হারিয়ে যাওয়া সুখগুলো। আঙ্গুলের ডগায় তাদের গায়ে ছুঁয়ে যাই নিভৃতে। এক সময় মনে হয়, সেখানেও কষ্টেরা ভির করছে। ধীরে ধীরে সুখময় স্মৃতিগুলো দুঃখ হয়ে আমার গলা চেপে ধরে। আমি অস্ফুটে ছটফট করে উঠি ।
মনে হয়, অবলীলায় ছেড়ে যাই পূর্ব পুরুষের ঘর। ছেড়ে যাই এই জমিন, বৃক্ষ-লতাদি আর নৈরাশ্যে জেগে উঠা চর! চলে যাই ভুলে পৃথিবীর কোন এক কোণায় যেখানে কেবল এলোমেলো স্বপ্ন গুলোকে তারার মত গুনে হিসেব মিলানো যায়। সবুজ ঘাসের শিশির কণায় দেখা মিলে জীবনের ক্ষুদ্র ক্ষুদ্র প্রাপ্তির। যেখানে কেবল ঘাসফড়িং আর বিলের ধারে দেখা মিলে লাল, নীল, হলদে, বেগুনী স্বপ্নদের!
যাওয়া হয়না। বহু বছরের পুরাতন অভ্যাসের মত তখনো আমি ভেসে যাই নিঃসঙ্গের অন্তরালে। আমি আর আমার মস্তিষ্কের বিকৃত ভাবনা, নীরব কথোপকথন করে রাতভর। আমার রন্ধ্রে রন্ধ্রে একাকীত্বের অস্তিত্ব টের পাই। ভীষন নিরবতায় আঁধারের মাঝে খুঁজে পাই বহুমাত্রিক জীবন, যেখানে মৃত্যু হেঁটে বেড়ায় শীতল পায়ে এঘর থেকে ওঘরে। মাথার ভিতর কে যেন হাতুড়ি নিয়ে দমাদম পিটিয়ে যায়। ঠকঠক করে কে যেন হেটে যায় ভাবনায় ছেঁদ কেটে । আমি গলা ফাটিয়ে চিৎকার করি। শব্দরা নীরবে সরে যায়। পৃথিবী শুনেনা আমার চিৎকার।
অতঃপর…………
এক সময়, নিঃসঙ্গতার কোলে মাথা রেখে ঘুমিয়ে পড়ি আমি আর আমার মস্তিষ্কের বিকৃত ভাবনা।