ইতিহাস !

নতুন প্রজন্ম মুক্তিযুদ্বের ইতিহাস কতটা জানে? জানলেও কি সঠিক টা জানে? আমরা প্রীতিলতার অবদান পড়েছি, সুর্য্যসেনের ইতিহাস জানি। কিন্তু ইতিহাস তীতুমীর ও শরিয়ত উল্লাহর কথা আমাদের ভুলিয়ে দিচ্ছে। সিপাহী বিপ্লবের কথা ক’জন জানে! 
তীতুমীরের জন্ম ১৭৮২ সালে পশ্চিমবঙ্গের ২৪ পরগনা জেলার বারাসাত মহকুমায়।
উনবিংশ শতাব্দীর শুরুর দিকে, এ অঞ্চলের মানুষ মারাঠা আর বর্গী, এবং পশ্চিমবঙ্গের অত্যাচারী জমিদার ও নীল করদের হাতে নিস্পেষিত ছিল। সামাজিক, অর্থনৈতিক ও রাজনৈতিক ভাবে লুন্ঠিত ছিল। বাঙ্গালী মুসলমানদের উপর বেশ কয়েকজন হিন্দু জমিদার নানা ধরনের অত্যাচার করত। মুসলমানদেরকে বাধ্যতামূলকভাবে পূঁজার পাঁঠা জোগাতে হতো, কেউ দাঁড়ি রাখলে সেজন্য চাঁদা দিতে হতো, মসজিদ নির্মাণ করলে কর দিতে হতো, এমনকি কেউ গরু জবাই করলে তার ডান হাত কেটে দেয়ার ঘটনাও কম ছিলনা। আর এই পটভূমিতে দরিদ্র মুসলিম কৃষকদের পক্ষে প্রতিবাদের আন্দোলন গড়ে তোলেন মীর নেসার আলী তিতুমীর। অন্যায়ের বিরুদ্ধে পরিচালিত তার এই আন্দোলন একসময় ইংরেজ বিরোধী স্বাধীকার আন্দোলনে রূপ নেয়।
শরিয়ত উল্লাহ ছিলেন ফরায়েজী (ব্রিটিশ বাংলার অন্যতম ধর্মীয় আন্দোলন) আন্দোলনের অন্যতম ফিগার।
ব্রিটিশ ইস্ট ইন্ডিয়া কোম্পানির শাসন প্রতিষ্ঠিত হওয়ার পর, মুসল্মানরা অর্থনৈতিক ও সামাজিক দিক দিয়ে বৈষম্যের শিকার হন।তিনি মুসল্মানদের মধ্যে শিক্ষা, সংস্কৃতি, ধর্মচর্চা প্রভৃতি বিষয়ে ব্যাপক অধঃপতন লক্ষ করে উপলব্ধি করেন, মুসলমানরা ইসলামের ফরজ বিধানগুলো ঠিকমতো পালন না করলে তাদের সার্বিক অবস্থার উন্নতি হবে না। মুসলমানদের ইমানি শক্তি বৃদ্ধি করে ব্রিটিশদের অন্যায়-অপশাসনের প্রতিবাদ করার জন্য তাদের তৈরি করা ছিল তাঁর লক্ষ্য।
ব্রিটিশ ইস্ট ইন্ডিয়া কোম্পানির দুঃশাসনে মুসলমানদের ধর্মীয়, সামাজিক, অর্থনৈতিক প্রভৃতি ক্ষেত্রে চরম দুর্দশাকর অবস্থার সৃষ্টি হলে তিনি কৃষকদের ঐক্যবদ্ধ করে শক্তিশালী লাঠিয়াল বাহিনী গঠন করে, বিভিন্নভাবে তাঁর আন্দোলন সংগঠন ও পরিচালনা করেন। তিনি মুসলমানদের ধর্মীয় বিধিনিষেধের গুরুত্ব বোঝানোর চেষ্টা করে ফরজ পালনের তাগিদ দেন, মুসলমানদের অধঃপতনের পেছনে কুসংস্কার কী কী ভূমিকা রাখে, তা বুঝিয়ে পরিহার করতে উৎসাহী করেন, নীলকর বণিকদের অত্যাচারে সর্বস্বান্ত কৃষকদের ঐক্যবদ্ধ করার চেষ্টা করেন। হাজী শরীয়ত উল্লাহ। ইস্ট ইন্ডিয়া কোম্পানির অপশাসন সম্পর্কে মুস্লিমদের অবহিত করে। ইস্ট ইন্ডিয়া কোম্পানীর অবিচার বিষয়ে জনমত তৈরী করেন। জনগণ তাঁর নেতৃত্বে ঐক্যবদ্ধ হয়ে সব অত্যাচার-শোষণের বিরুদ্ধে রুখে দাঁড়ায়।
দুঃখজনক হলেও সত্যি, জাতীর কাছে ইতিহাস এখন বিকৃত। সমাজের প্রতিনিধিরা ফরায়েজি আন্দোলনের কথা স্বরন করেনা। তীতুমীর, শরিয়ত উল্লাহ দের কথা বলেনা। মানবাধিকার এখানেও লংঘন হচ্ছে।

 

ডার্ক এভিল