ইভ টিজিং নিয়ে কিছু লিখতে অসস্থ্যিবোধ করি। কেননা, এটা খুব বিতর্কিত একটি বিষয়। অনেকেই মনে করেন, নারীর অশালীন ঔদ্ধতপূর্ণ আচরণ ইভ টিজিং এর জন্য দায়ী। আমি বিনয়ের সাথে বলতে চাই, বিষয়টা আদৌ তা নয়। যে কোন পুরুষ নগ্ন নারী দেখলে বা অশালীন কাপর পরিহিতা নারী দেখলে কামোত্তেজনা বোধ করেন। সেই পুরুষই কিন্তু আবার বোরকা পরিহিতা নারী দেখলে সন্মানের চোখে তাকান বা বিশেষ কামোত্তেজক কথা থেকে বিরত থাকতে পারে্ন। তাহলে বিষয়টা কি দাঁড়ালো ? নারীকে উত্যক্ত করা, একান্তই পুরুষের, নিজের অভিমত বা ইচ্ছাশক্তির উপরই নির্ভর করে। থাকনা রাস্তায় লোভনীয় হাড্ডী পড়ে! আমি মানুষ, সৃষ্টির সেরা জীব, কেন সেই হাড্ডির জন্য কুকুর হয়ে যাবো?
যখন কোন নারী ইভ টিজিং এর শিকার হন, তখন দেখা যায় সবাই সে নারীকেই দোষারুপ করেন। তার চলন-বলন বা পোশাককেই দায়ী করেন। যখন সেই ব্যাক্তিদের নিজের পরিবারে কেউ ইভ টিজিং এর শিকার হন, তখন কিন্তু নিজের মা-বোন বা আত্বীয়কে দোষারুপ করেন না। যখন নিজের মা-বোন বুকের উড়না ফেলে বাড়ীতে হাটেন, তখন তো তাদের নগ্ন বক্ষে ওদের চোখ আঁটকে না! যদি নারীর অশালীন,ঔদ্ধতপূর্ণ’ পোশাকই ইভ টিজিং এর কারণ হতো, তবে প্রতিদিন ২ বছরের শিশু থেকে ৯০ বছরের বৃদ্বা পর্যন্ত ধর্ষণের শিকার হতনা। যদি নারীর অশ্লীল পোশাকই সকল অপরাধ এর কারণ হতো, তবে বাবা তার নিজ ঔরসজাত সন্তানকে ধর্ষণ করতোনা। যদি তাই হতো, তবে বিশ্বের প্রতিটা পুরুষ রোজ একবার হলেও তার নিজের মা-বোনকে উত্যক্ত করতো কিংবা ধর্ষণ করত।
আমরা প্রায়ই শুধু নারীদের পর্দার কথা বলি, পুরুষদের ‘পর্দা’টা আড়ালেই থেকে যায়। যদি বেপর্দাই নারীর টিজড হওয়ার কারণ হয়ে থাকে, তবে পুরুষের জন্যও সেই একি পর্দার বিধান রয়েছে। সুরা আন-নূর ,আয়াত ৩০ এ বলা হয়েছে, ” মুমিন পুরুষদের বলঃ তারা যেন তাদের দৃষ্টিকে সংযত করে এবং তাদের লজ্জাস্থানের হিফাজত করে; এটাই তাদের জন্য উত্তম; তারা যা করে সে বিষয়ে আল্লাহ্ অবহিত। “
কোন মেয়ে বা নারী ইভ টিজিং এর শিকার হলে আমরা তাকেই বদলে দেই। ‘এই তুমি আর সন্ধ্যার পর একা বাহিরে যাবেনা’, ‘এই আজ থেকে তুমি আর ফ্রগ পরবেনা’, হিজাব ছাড়া বাহিরে যাবেনা’, ‘ছোট ভাইকে ছাড়া একা কোথাও যাবেনা’ .. ইত্যাদি নানানভাবে আমরা কেবল নারীকেই কিছু ধরা বাঁধা ছকে বন্দি করে দেই। আর সেই টিজার পুরুষ মনের আনন্দে একজন হারালো তো অন্যজনকে তার কুৎসিত যৌন কামনার আহার হিসাবে খুঁজে নেয়। এটা কেন? অন্যায় সয়ে পালিয়ে বেড়ানো বা নিজেকে গুটিয়ে নেয়ার অর্থই হলো আমরা সেই নোংরা মনের কুরুচিপূর্ণ পুরুষটাকে তার কুৎসিত কর্মকান্ডে বাহ বাহ দিচ্ছি। তাকে জয়ী হতে সাহাহ্য করছি। নয় কি?
সমাজ যতই উন্নত হোক, সর্বত্র নারীর অবস্থান মুলতঃ একি। এ দেশে অপরাধীদের জন্য নিরপরাধরা বন্দি জীবন যাপন করে। সমাজ বা পরিবার প্রতিবাদ না করে নিজের কন্যা, বোন, স্ত্রীর জীবন থামিয়ে দেয় এক পলকেই। বদৌলতে, অপরাধীদের ছেড়ে দেয় বুক ফুলিয়ে আরো দশটা নিরপরাধ এর প্রাণ দূর্বিসহ করতে। সরকারকে দোষ দিয়ে লাভ নেই। যে সয়, যাতনা সেই বুঝে! আজ অবধি শুনিনি দেশের প্রধানমন্ত্রী বা মন্ত্রীর কন্যা, স্ত্রী বা বোন ইভ টিজিং এর শিকার হয়েছে। তাহলে সরকার কেন ওই সব অসহায়দের প্রতি ঘটে যাওয়া অন্যায় এর ব্যাবস্থা নিবে? দেশে ইভ টিজিং আইন আছে, প্রয়োগ নেই। টাকা থাকলে এ দেশে আইন কেনা কোন ব্যাপার নয়।
প্রতিকার এর উপায় আমাদেরই খুঁজতে হবে। প্রতিটা মা-বাবার সচেতন হওয়া খুব প্রয়োজন। পরিবার হচ্ছে সন্তানের প্রথম পাঠশালা। মা-বাবার উচিত, তাদের বাড়ন্ত বয়সী সন্তানকে সঠিক ধর্মীয় ও মানবিক গুনাবলীর আদর্শে দীক্ষিত করা। সন্তানের শাসক না হয়ে, বন্ধু হোন। সন্তানকে ভাল-মন্দের পার্থক্য নির্ণয়ে সাহায্য করুন, তাদের সঙ্গদোষ আর অপসংস্কৃতির প্রয়োগ থেকে বিরত রাখুন। ইভ টিজিং এর মত সামাজিক ব্যাধি সমাজ থেকে দূর না হওয়া পর্যন্ত, আমাদের ভবিষ্যত প্রজন্ম, দেশ ও জাতী কখনো সামনে এগুতে পারবে না।
______HB Rita
ইভ টিজিং
ইভ টিজিং নিয়ে কিছু লিখতে অসস্থ্যিবোধ করি। কেননা, এটা খুব বিতর্কিত একটি বিষয়। অনেকেই মনে করেন, নারীর অশালীন ঔদ্ধতপূর্ণ আচরণ ইভ টিজিং এর জন্য দায়ী। আমি বিনয়ের সাথে বলতে চাই, বিষয়টা আদৌ তা নয়। যে কোন পুরুষ নগ্ন নারী দেখলে বা অশালীন কাপর পরিহিতা নারী দেখলে কামোত্তেজনা বোধ করেন। সেই পুরুষই কিন্তু আবার বোরকা পরিহিতা নারী দেখলে সন্মানের চোখে তাকান বা বিশেষ কামোত্তেজক কথা থেকে বিরত থাকতে পারে্ন। তাহলে বিষয়টা কি দাঁড়ালো ? নারীকে উত্যক্ত করা, একান্তই পুরুষের, নিজের অভিমত বা ইচ্ছাশক্তির উপরই নির্ভর করে। থাকনা রাস্তায় লোভনীয় হাড্ডী পড়ে! আমি মানুষ, সৃষ্টির সেরা জীব, কেন সেই হাড্ডির জন্য কুকুর হয়ে যাবো?
যখন কোন নারী ইভ টিজিং এর শিকার হন, তখন দেখা যায় সবাই সে নারীকেই দোষারুপ করেন। তার চলন-বলন বা পোশাককেই দায়ী করেন। যখন সেই ব্যাক্তিদের নিজের পরিবারে কেউ ইভ টিজিং এর শিকার হন, তখন কিন্তু নিজের মা-বোন বা আত্বীয়কে দোষারুপ করেন না। যখন নিজের মা-বোন বুকের উড়না ফেলে বাড়ীতে হাটেন, তখন তো তাদের নগ্ন বক্ষে ওদের চোখ আঁটকে না! যদি নারীর অশালীন,ঔদ্ধতপূর্ণ’ পোশাকই ইভ টিজিং এর কারণ হতো, তবে প্রতিদিন ২ বছরের শিশু থেকে ৯০ বছরের বৃদ্বা পর্যন্ত ধর্ষণের শিকার হতনা। যদি নারীর অশ্লীল পোশাকই সকল অপরাধ এর কারণ হতো, তবে বাবা তার নিজ ঔরসজাত সন্তানকে ধর্ষণ করতোনা। যদি তাই হতো, তবে বিশ্বের প্রতিটা পুরুষ রোজ একবার হলেও তার নিজের মা-বোনকে উত্যক্ত করতো কিংবা ধর্ষণ করত।
আমরা প্রায়ই শুধু নারীদের পর্দার কথা বলি, পুরুষদের ‘পর্দা’টা আড়ালেই থেকে যায়। যদি বেপর্দাই নারীর টিজড হওয়ার কারণ হয়ে থাকে, তবে পুরুষের জন্যও সেই একি পর্দার বিধান রয়েছে। সুরা আন-নূর ,আয়াত ৩০ এ বলা হয়েছে, ” মুমিন পুরুষদের বলঃ তারা যেন তাদের দৃষ্টিকে সংযত করে এবং তাদের লজ্জাস্থানের হিফাজত করে; এটাই তাদের জন্য উত্তম; তারা যা করে সে বিষয়ে আল্লাহ্ অবহিত। “
কোন মেয়ে বা নারী ইভ টিজিং এর শিকার হলে আমরা তাকেই বদলে দেই। ‘এই তুমি আর সন্ধ্যার পর একা বাহিরে যাবেনা’, ‘এই আজ থেকে তুমি আর ফ্রগ পরবেনা’, হিজাব ছাড়া বাহিরে যাবেনা’, ‘ছোট ভাইকে ছাড়া একা কোথাও যাবেনা’ .. ইত্যাদি নানানভাবে আমরা কেবল নারীকেই কিছু ধরা বাঁধা ছকে বন্দি করে দেই। আর সেই টিজার পুরুষ মনের আনন্দে একজন হারালো তো অন্যজনকে তার কুৎসিত যৌন কামনার আহার হিসাবে খুঁজে নেয়। এটা কেন? অন্যায় সয়ে পালিয়ে বেড়ানো বা নিজেকে গুটিয়ে নেয়ার অর্থই হলো আমরা সেই নোংরা মনের কুরুচিপূর্ণ পুরুষটাকে তার কুৎসিত কর্মকান্ডে বাহ বাহ দিচ্ছি। তাকে জয়ী হতে সাহাহ্য করছি। নয় কি?
সমাজ যতই উন্নত হোক, সর্বত্র নারীর অবস্থান মুলতঃ একি। এ দেশে অপরাধীদের জন্য নিরপরাধরা বন্দি জীবন যাপন করে। সমাজ বা পরিবার প্রতিবাদ না করে নিজের কন্যা, বোন, স্ত্রীর জীবন থামিয়ে দেয় এক পলকেই। বদৌলতে, অপরাধীদের ছেড়ে দেয় বুক ফুলিয়ে আরো দশটা নিরপরাধ এর প্রাণ দূর্বিসহ করতে। সরকারকে দোষ দিয়ে লাভ নেই। যে সয়, যাতনা সেই বুঝে! আজ অবধি শুনিনি দেশের প্রধানমন্ত্রী বা মন্ত্রীর কন্যা, স্ত্রী বা বোন ইভ টিজিং এর শিকার হয়েছে। তাহলে সরকার কেন ওই সব অসহায়দের প্রতি ঘটে যাওয়া অন্যায় এর ব্যাবস্থা নিবে? দেশে ইভ টিজিং আইন আছে, প্রয়োগ নেই। টাকা থাকলে এ দেশে আইন কেনা কোন ব্যাপার নয়।
প্রতিকার এর উপায় আমাদেরই খুঁজতে হবে। প্রতিটা মা-বাবার সচেতন হওয়া খুব প্রয়োজন। পরিবার হচ্ছে সন্তানের প্রথম পাঠশালা। মা-বাবার উচিত, তাদের বাড়ন্ত বয়সী সন্তানকে সঠিক ধর্মীয় ও মানবিক গুনাবলীর আদর্শে দীক্ষিত করা। সন্তানের শাসক না হয়ে, বন্ধু হোন। সন্তানকে ভাল-মন্দের পার্থক্য নির্ণয়ে সাহায্য করুন, তাদের সঙ্গদোষ আর অপসংস্কৃতির প্রয়োগ থেকে বিরত রাখুন। ইভ টিজিং এর মত সামাজিক ব্যাধি সমাজ থেকে দূর না হওয়া পর্যন্ত, আমাদের ভবিষ্যত প্রজন্ম, দেশ ও জাতী কখনো সামনে এগুতে পারবে না।
______HB Rita
Published by HB Rita on Monday, June 23rd, 2014