এ এক সত্যিকার বীরঙ্গনার আর্তনাদ——————————
আমি প্রভা রানী মালাকার। কমলগঞ্জ উপজেলার মুন্সীবাজার ইউনিয়নের মির্জানগর গ্রামের এক ইতিহাস আমি। আমি এক অবহেলীত বীরাঙ্গনা । এক গর্বিত স্ত্রী।
আজ থেকে ৪৪ বছর আগে, আমি আমার সম্ভ্রম দিয়েছিলাম পাক হানাদারদের হাতে। বিক্রম কলস গ্রামে ও শমশেরনগর ডাক বাংলোয় পাক সেনা ক্যাম্পে দু’বার পাক সেনা ও রাজাকারদের হাতে গণ ধর্ষনের হয়েছি আমি। বিনিময়ে রক্ষা করেছিলাম মীর্জানগর গ্রামের অনেক অসহায় মানুষ প্রাণ। বিনিময়ে এসেছিল বাংলার স্বাধীনতা।
আমি তখন ১৫ বছরের যুবতি। বৈশাখ মাসে বিয়ে হয়। ৪ মাস পর শ্রাবন মাসে শুরু হয় মুক্তিযুদ্ব। আমার স্বামী কামিনী রাম মালাকার আমাকে বাবার বাড়ী বিক্রম কলসে রেখে চলে যান ভারত। আর তখনই নেমে আসে আমার দুঃস্বপ্নের রাত। গ্রারামের জাকার নজির মিয়া ও জহুর মিয়া আমাকে ধরে নিয়ে যান আমার মা এর সামনে থেকে। বাদল মাষ্টারের বাড়ী রেখে রাতভর পালাক্রমে ধর্ষন করেন। পরদিন সকালে আর্মিরা ছেড়ে দিলে বোনের বাড়ী আশ্রয় নেই। সেখান থেকে আবারো আবারো আমাকে ধরে নিয়ে যাওয়া হয় শমশেরনগর ডাক বাংলায় পাকিস্তানী সেনা ক্যাম্পে। সারা রাত পাকিস্তানী সেনারা আবারো আমাকে পর্যায়ক্রমে ধর্ষন করে।
আজ ৪৪ বছর, লোকে বলে আমি পাঞ্জাবীর বউ। হ্যা,আমি সেই অবহেলীত পাঞ্জাবীর বীরঙ্গনা ।
দেশ স্বাধীন হলো। স্বামী ফিরে এলো ভারত থেকে। স্বামীকে আমাকে নিতে এলো। বললাম, ” আমি তো নষ্ট “।
স্বামী বলল , ” তোমার মতো লাখ লাখ নারী ইজ্জত দিয়েছে দেশের জন্য। তুমিও তাদের একজন। আমার কোন দুঃখ নেই “।
হ্যা, আমি সেই বীর স্বামীর গর্বিত স্ত্রী।
১৯৭২ এ আমার এক ছেলের জন্ম হয়। কিছুটা মানসিক প্রতিবন্দ্বি। কয়েক বছর পর মিথ্যে মামলায় স্বামী কারাভোগের পর গত হোন।
জীবিকার প্রয়োজনে বেঁছে নেই ফ্যারী করা। স্বামীর রেখে যাওয়া ভিটে মাটি টুকুও দখল করেছে ক্ষমতাধররা।
স্বাধীনতার এত বছর পর ও আমার ভাগ্যে জুটেনি বীরাঙ্গনার স্বীকৃতি। পাইনি কোন সরকারী সাহায্য সহযোগীতা। লোকে আমায় বলে পাঞ্জাবীর বউ। ছেলেকে বলে পাঞ্জাবীর যারজ সন্তান।
দেশের জন্য সম্ভ্রম দিলাম, স্বামী দিলাম, বিনিময়ে এ দেশ আমায় কি দিয়েছে?
আজ যারা বাংলার পতাকা হাতে জাতীয় সঙ্গীত গায়, দামী পোষাকে সভায়, মিছিলে মুক্তিযুদ্বে নির্যাতিতা বীরঙ্গনাদের জন্য সমবেদনা দেখায়, তাদের কাছে আমার প্রশ্ন, আর কত এই দেখানো নাটক চলবে?
আজ যারা কালো টাকায় সুখ কিনছে, তাদের ওই সুখে লেগে আছে আমার ক্ষতবিক্ষত যোণীর রক্ত। তাদের হাসিতে উড়ে আমার বুকের গভীরে লুকানো দীর্ঘস্বাস।
এ দেশ আমায় কি দিয়েছে? পাঞ্জাবীর রক্ষিতা বলে খেতাব? এ দেশ আমি চাইনা। এ স্বাধীনতা আর বাংলার জয়গান আমি শুনতে চাইনা।
আজ আমার সন্তানকে বলা হয় পাঞ্জাবীর যারজ সন্তান। সমাজের কুকুর গুলীর মুখে থু থু ফেলি। আজ আমার সন্তান যারজ বলেই তোদের মায়েরা কোন যারজ সন্তান পয়দা করেনি। তোরা ভাগ্য নিয়ে জন্মেছিস। আমার মত আরো বহুজনের সন্তানরা যারজ বলেই তোরা বেঁচে গেছিস।
তোদের ভদ্র সমাজে এখনো রাতের আঁধারে বহু যারজ পয়দা হয়। কেউ দেখেনা।
মনে হয় আরেকটি যুদ্ব হোক। সেই যুদ্বে আমি তোদের ক্ষমতা কেড়ে নেই। তোদের গুলী করে মারি। তোদের মুখে প্রশ্রাব করি। আমার লজ্জা নেই। লজ্জা তো সেদিনই বিসর্জন দিয়েছি যেদিন আমার দেহ ক্ষতবিক্ষত করেছিল হায়ানার দল। লজ্জা তো সেদিনই বিসর্জন দিয়েছি যেদিন অচ্যুত শরীর নিয়ে স্বামীর বাহুতে গিয়েছিলাম।
আজ স্বাধীনতার নামে তোরা বাংলার বুক দাপিয়ে বেড়াস। প্রস্রাব করি তোদের মুখে। থু থু ফেলি তোদের স্বাধীনতার বুলিতে। এ দেশ স্বাধীন হয়নি। বাংলার ভুমিতে এখনো আমার মত শত শত বীরঙ্গনা না খেয়ে থাকে। পথে পথে ফেরী করে। এ স্বাধীনতা আমি ভোগ করিনি। আমার সন্তান ভোগ করেনি। এ স্বাধীনতা আমার নয়।
এ দেশ আমি চাইনা। এ স্বাধীনতা আমি চাইনা। যুদ্ব হোক আরো একটি বার।
—————-HB Rita
প্রভা রানীঃ এক বীরঙ্গনা
আমি প্রভা রানী মালাকার। কমলগঞ্জ উপজেলার মুন্সীবাজার ইউনিয়নের মির্জানগর গ্রামের এক ইতিহাস আমি। আমি এক অবহেলীত বীরাঙ্গনা । এক গর্বিত স্ত্রী।
আজ থেকে ৪৪ বছর আগে, আমি আমার সম্ভ্রম দিয়েছিলাম পাক হানাদারদের হাতে। বিক্রম কলস গ্রামে ও শমশেরনগর ডাক বাংলোয় পাক সেনা ক্যাম্পে দু’বার পাক সেনা ও রাজাকারদের হাতে গণ ধর্ষনের হয়েছি আমি। বিনিময়ে রক্ষা করেছিলাম মীর্জানগর গ্রামের অনেক অসহায় মানুষ প্রাণ। বিনিময়ে এসেছিল বাংলার স্বাধীনতা।
আমি তখন ১৫ বছরের যুবতি। বৈশাখ মাসে বিয়ে হয়। ৪ মাস পর শ্রাবন মাসে শুরু হয় মুক্তিযুদ্ব। আমার স্বামী কামিনী রাম মালাকার আমাকে বাবার বাড়ী বিক্রম কলসে রেখে চলে যান ভারত। আর তখনই নেমে আসে আমার দুঃস্বপ্নের রাত। গ্রারামের জাকার নজির মিয়া ও জহুর মিয়া আমাকে ধরে নিয়ে যান আমার মা এর সামনে থেকে। বাদল মাষ্টারের বাড়ী রেখে রাতভর পালাক্রমে ধর্ষন করেন। পরদিন সকালে আর্মিরা ছেড়ে দিলে বোনের বাড়ী আশ্রয় নেই। সেখান থেকে আবারো আবারো আমাকে ধরে নিয়ে যাওয়া হয় শমশেরনগর ডাক বাংলায় পাকিস্তানী সেনা ক্যাম্পে। সারা রাত পাকিস্তানী সেনারা আবারো আমাকে পর্যায়ক্রমে ধর্ষন করে।
আজ ৪৪ বছর, লোকে বলে আমি পাঞ্জাবীর বউ। হ্যা,আমি সেই অবহেলীত পাঞ্জাবীর বীরঙ্গনা ।
দেশ স্বাধীন হলো। স্বামী ফিরে এলো ভারত থেকে। স্বামীকে আমাকে নিতে এলো। বললাম, ” আমি তো নষ্ট “।
স্বামী বলল , ” তোমার মতো লাখ লাখ নারী ইজ্জত দিয়েছে দেশের জন্য। তুমিও তাদের একজন। আমার কোন দুঃখ নেই “।
হ্যা, আমি সেই বীর স্বামীর গর্বিত স্ত্রী।
১৯৭২ এ আমার এক ছেলের জন্ম হয়। কিছুটা মানসিক প্রতিবন্দ্বি। কয়েক বছর পর মিথ্যে মামলায় স্বামী কারাভোগের পর গত হোন।
জীবিকার প্রয়োজনে বেঁছে নেই ফ্যারী করা। স্বামীর রেখে যাওয়া ভিটে মাটি টুকুও দখল করেছে ক্ষমতাধররা।
স্বাধীনতার এত বছর পর ও আমার ভাগ্যে জুটেনি বীরাঙ্গনার স্বীকৃতি। পাইনি কোন সরকারী সাহায্য সহযোগীতা। লোকে আমায় বলে পাঞ্জাবীর বউ। ছেলেকে বলে পাঞ্জাবীর যারজ সন্তান।
দেশের জন্য সম্ভ্রম দিলাম, স্বামী দিলাম, বিনিময়ে এ দেশ আমায় কি দিয়েছে?
আজ যারা বাংলার পতাকা হাতে জাতীয় সঙ্গীত গায়, দামী পোষাকে সভায়, মিছিলে মুক্তিযুদ্বে নির্যাতিতা বীরঙ্গনাদের জন্য সমবেদনা দেখায়, তাদের কাছে আমার প্রশ্ন, আর কত এই দেখানো নাটক চলবে?
আজ যারা কালো টাকায় সুখ কিনছে, তাদের ওই সুখে লেগে আছে আমার ক্ষতবিক্ষত যোণীর রক্ত। তাদের হাসিতে উড়ে আমার বুকের গভীরে লুকানো দীর্ঘস্বাস।
এ দেশ আমায় কি দিয়েছে? পাঞ্জাবীর রক্ষিতা বলে খেতাব? এ দেশ আমি চাইনা। এ স্বাধীনতা আর বাংলার জয়গান আমি শুনতে চাইনা।
আজ আমার সন্তানকে বলা হয় পাঞ্জাবীর যারজ সন্তান। সমাজের কুকুর গুলীর মুখে থু থু ফেলি। আজ আমার সন্তান যারজ বলেই তোদের মায়েরা কোন যারজ সন্তান পয়দা করেনি। তোরা ভাগ্য নিয়ে জন্মেছিস। আমার মত আরো বহুজনের সন্তানরা যারজ বলেই তোরা বেঁচে গেছিস।
তোদের ভদ্র সমাজে এখনো রাতের আঁধারে বহু যারজ পয়দা হয়। কেউ দেখেনা।
মনে হয় আরেকটি যুদ্ব হোক। সেই যুদ্বে আমি তোদের ক্ষমতা কেড়ে নেই। তোদের গুলী করে মারি। তোদের মুখে প্রশ্রাব করি। আমার লজ্জা নেই। লজ্জা তো সেদিনই বিসর্জন দিয়েছি যেদিন আমার দেহ ক্ষতবিক্ষত করেছিল হায়ানার দল। লজ্জা তো সেদিনই বিসর্জন দিয়েছি যেদিন অচ্যুত শরীর নিয়ে স্বামীর বাহুতে গিয়েছিলাম।
আজ স্বাধীনতার নামে তোরা বাংলার বুক দাপিয়ে বেড়াস। প্রস্রাব করি তোদের মুখে। থু থু ফেলি তোদের স্বাধীনতার বুলিতে। এ দেশ স্বাধীন হয়নি। বাংলার ভুমিতে এখনো আমার মত শত শত বীরঙ্গনা না খেয়ে থাকে। পথে পথে ফেরী করে। এ স্বাধীনতা আমি ভোগ করিনি। আমার সন্তান ভোগ করেনি। এ স্বাধীনতা আমার নয়।
এ দেশ আমি চাইনা। এ স্বাধীনতা আমি চাইনা। যুদ্ব হোক আরো একটি বার।
—————-HB Rita
Published by HB Rita on Saturday, February 7th, 2015