হারিয়ে গেছে ঈদকার্ড

একটা সময় ছিল, যখন ঈদ মানেই হরেক রকমের ঈদকার্ডে নিজের মনের কিছু আবেগ ঢেলে, দুই চার লাইনে প্রিয় বন্ধুকে শুভেচ্ছা জানানোই ছিল, মূলত ঈদের নতুন কাপরের সাথে যোগ হওয়া আরেকটি খুশী।
শহর থেকে গ্রামে সর্বত্র ছোট বড় দোকান গুলোতে চলতো ঈদের রমরমা ব্যাবসা। বিভিন্ন সাইজের কার্ডগুলোতে থাকতো মনকাড়া সুন্দর সব ঈদের ছবি।
গম্বুজওয়ালা মসজিদের ওপরে ঈদের স্মারক চাঁদ বা তারা , সাদা কার্ডের মধ্যে এক তোড়া লাল গোলাপের মাঝখানে লেখা থাকতো ঈদ মোবারক,ছোট দুটি শিশুর সাদা পাঞ্জাবী-পায়জামা ও গোল টুপিতে কোলাকোলি করার ছবি, আরো থাকতো রাস্তার উপরে রশিতে ঝুলানো ত্রিভূজ আকৃতির রঙ্গিন কাগজে লিখা “ঈদ মোবারক”। সেই সাথে আরো একটি বিষয় ছিল লক্ষ্যনীয়- ঈদকার্ডটিতে প্রিয় বন্ধুকে শুভেচ্ছাবানী লিখার সময় থাকতো এক ধরনের টান টান উত্তেজনা! হাতের লিখা সুন্দর করার জন্য খুব সতর্কতার সাথে লিখা হতো। সম্ভব হলে হরেকরঙ্গা কালী ব্যাবহার করা হত কার্ডে সৌন্দর্য্য বৃধির জন্য।
কিন্তু সেই ঈদকার্ড এখন কোথায়?

প্রযুক্তি মানুষের অনেক রীতিনীতি ও সামাজিকতা বদলে দিয়েছে। এখন আর সেই পুরানো স্টাইলে কেউ ঈদকার্ড কিনে তাতে গোটা গোটা সুন্দর হরফে ঈদের শুভেচ্ছা লিখেনা। এখন মোবাইলের এসএমএসের মাধ্যমে ছন্দ মিলিয়ে ঈদ শুভেচ্ছা পাঠানো হয়। সামাজিক যোগাযোগের মাধ্যম ফেইসবুক এবং টুইটার একাউন্টে মেসেজের মাধ্যমে জানানো হয় ঈদ শুভেচ্ছা! কখনো নিজ ওয়ানে সবাইকে ট্যাগ করে পোষ্ট করা হয় মোহনীয় ঈদকার্ড, যাতে এক ঢিলে দুই পাখী মারার মত সবাই জেনে যায়, “ঈদ আসছে”!
আমাদের সময়টাতে দুটো ঈদকার্ড কিনতে হলেও মাকে নানান বায়না করে টাকা নিতে হতো। কখনো বা স্কুলের টিফিনের টাকা বা রিক্সা ভাড়া বাঁচিয়ে রাখতাম ঈদকার্ড কেনার জন্য। এখনকার জেনারেশনকে সেই সমস্যা গুলো ফেইস করতে হয়না। এখন মোটামোটি অনেকের হাতেই থাকে বেহিসাবী খরচের টাকা, শুধু থাকেনা হৃদয় দিয়ে হৃদয়কে অনুভব করার জন্য একটি ঈডকার্ড কেনার ইচ্ছা!

প্রযুক্তির এ ব্যবহারের ফলে হারিয়ে যাচ্ছে ঈদ কার্ডের প্রচলন, হারিয়ে যাচ্ছে আমাদের নিখুঁত আবেগময় আনন্দগুলো! সবকিছু এখন কৃত্রিম!