রাজনীতিবিদদের দখলে বিশ্ববিদ্যালয়গুলো

রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ের ৬৫তম প্রতিষ্ঠাবার্ষিকীর অনুষ্ঠানে কোটা সংস্কার আন্দোলনকারী তরুনদের বাম ঘরানার শিবির, সংক্ষেপে ‘বাশি’ বলে অভিহিত করেছেন রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য অধ্যাপক এম আবদুস সোবহান। শুধু তাই নয়, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য অধ্যাপক আখতারুজ্জামানও কোটা সংস্কার আন্দোলনকারীদের জঙ্গিদের সঙ্গে তুলনা করেছেন।
এমন কি কোটা সংস্কারের আন্দোলনকারীদের ওপর হামলার প্রতিবাদ জানাতে ৪ জুলাই রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ের অর্থনীতি বিভাগের সহযোগী অধ্যাপক ফরিদ খান গত মঙ্গলবার শহীদ জোহা চত্বরে নগ্ন পায়ে নীরবতা পালন করতে চাইলে, তাকেও বাঁধা দেয়া হয়।

উপাচার্য হিসেবে অধ্যাপক সোবহান আওয়ামী লীগ সরকার গঠনের পর ২০০৯ থেকে ২০১৩ সালে প্রথম দফায় একবার এই দায়িত্ব পালন করেছেন। এটি তার দ্বিতীয় মেয়াদ। রাজনীতিতে তিনি অনেক দিন ধরেই সক্রিয় এবং আওয়ামী লীগের সমর্থক। ২০০৭ সালে সেনাসমর্থিত সরকারের আমলে দলীয় রাজনীতির জন্য তিনি হাজত খাটেন। হতে পারে দল ক্ষমতায় এসে তাঁকে পুরস্কৃত করতেই এই পদ দিয়েছেন।
কিন্তু কথা হল, রাজনীতিতে সক্রিয় শিক্ষকের দলীয় আনুগত্য থাকতেই পারে, তাই বলে উপাচার্যের পদ গ্রহণের পর তার কোনো সীমারেখা থাকবে না, একজন দায়ীত্বপ্রাপ্ত উপচার্য্য তার বিশ্ববিদ্যালয়ে কোটা সংস্কারের দাবীতে আন্দোলনরত শিক্ষার্থীদের নিয়ে উপহাস করবেন, এতে কি প্রমান হয়? ক্ষমতাশীল দলের প্রতি রাজনৈতিক আনুগত্যই কি তবে কর্তব্যরতদের একমাত্র লক্ষ্য?

দেশের ৩৪টি সরকারি বিশ্ববিদ্যালয়ে উপাচার্য নিয়োগ দেয় সরকার এবং এক্ষেত্রে সুনির্দিষ্ট কোন নিয়মনীতি মানা হয়না।এর ফলে উপাচার্য হওয়ার জন্য একজন শিক্ষকের প্রধান যোগ্যতা হয়ে উঠেছে রাজনৈতিক পরিচয়, ক্ষমতাসীন দলের সঙ্গে সম্পৃক্ততা বা আনুগত্য। এতে করে দেখা যাচ্ছে উপচার্য্য পদটি বিশ্ববিদ্যালয়গুলোতে যোগ্য অধ্যাপকের চেয়ে অপেক্ষাকৃত কম যোগ্য বা রাজনীতির সাথে জড়িত অধ্যাপকদের কাছেই চলে যাচ্ছে।শিক্ষাগত যোগ্যতায় ঘাটতি থাকলেও চলে, পিএইচডি ডিগ্রি না থাকলেও চলে, কিন্তু প্রার্থীর বেলায় রাজনৈতিক আনুগত্য ও সম্পৃক্ততা না থাকলে বিশ্ববিদ্যালয়গুলোতে উপচার্য্য পদ পাওয়া অসম্ভব ব্যাপার হয়ে দাঁড়িয়েছে।

কাজেই বুঝতো কারো সমস্যা হওয়ার কথা না, রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্রলীগের নেতা আবদুল্লাহ আল মামুন দ্বারা হাতুরী দিয়ে একই বিশ্ববিদ্যালয়ের কোটা আন্দোলনের শিক্ষার্থী তরিকুলকে পিটিয়ে পঙ্গু করার পরও কেন উপচার্য্য এম আব্দুস সোবহান তাকে দেখতে যাননি।