বাংলাদেশ স্থানীয় সময় সোমবার(১২ মার্চ,২০১৮) দুপুর ৩:২০ মিনিটে কাঠমান্ডুর ত্রিভুবন বিমানবন্দরে অবতরণের সময়, টার্বোপ্রপ ইঞ্জিনচালিত ইউএস-বাংলার ড্যাশ ৮-কিউ৪০০ এয়ারক্রাফ্টটি (ফ্লাইট বিএস ২১১) হঠাৎ রানওয়ে বদলে এয়ারপোর্টের একটি ফুটবল মাঠে ছিটকে পড়ে। মুহূর্তেই আগুন ধরে যায় বিমানটিতে। নেপালের কাঠমাণ্ডুতে ভয়াবহ বিমান দূর্ঘটনায় এখন পর্যন্ত ৫০ জনের মৃত্যুর খবর পাওয়া গেছে। এর মধ্যে ১৩ জন নেপালের মেডিক্যাল শিক্ষার্থী।
নেপালের কাঠমান্ডুতে ইউএস-বাংলা এয়ারলাইন্সের বিধ্বস্ত বিমানটিতে ৪ জন ক্রু এবং ৬৭ জন যাত্রী অর্থাৎ মোট ৭১ জন ছিলেন।এর মধ্যে চার ক্রুসহ ৩৬ জন বাংলাদেশি ছিলেন।৩৬ জন বাংলাদেশির ২৬ জনই বিমান দূর্ঘটনায় নিহত হয়েছেন। বাকিরা কাঠমান্ডুর বিভিন্ন হাসপাতালে চিকিৎসাধীন রয়েছেন। চিকিৎসাধীনদের একেক জনের অবস্থা একেক রকম। কারো ব্যাপারে নির্দিষ্ট করে কিছু বলা যাচ্ছেনা। পরিস্থিতি পর্যবেক্ষণে ১৩ মার্চ নেপালে গিয়েছিলেন বাংলাদেশ বিমানমন্ত্রী। শুক্রবার দেশে ফিরে এসে তিনি জানান, ‘আমাকে নেপাল কর্তৃপক্ষ আটজনের লাশ দেখিয়েছে। বাকি ১৮ জনের লাশ বস্তাবন্দি। দেখে চেনার উপায় নেই। বস্তায় পোড়া মানুষের ছাই। ডিএনএ টেস্ট ছাড়া শনাক্তের উপায় নেই।’
ইউএস-বাংলার যাত্রাঃ
মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র এবং বাংলাদেশের যৌথ উদ্যোগে প্রতিষ্ঠিত ইউএস-বাংলা বাংলাদেশের একটি বেসরকারি বিমান সংস্থা। গত ১৭ই জুলাই ২০১৪তে চট্রগ্রাম ও যশোর ফ্লাইট দিয়ে যাত্রা শুরু করেন ইউএস-বাংলা এয়ারলাইন্স।ইউএস-বাংলা এয়ারলাইন্স এর বহরে রয়েছে পৃথিবীর সর্বাধুনিক DASH-8-Q400 এর দুইটি Turboprop এয়ারক্রাফট। ইউএস-বাংলার ড্যাশ ৮-কিউ৪০০ এয়ারক্রাফটটি পরিচালনা করছিলেন ক্যাপ্টেন আবিদ সুলতান এবং তার সহকারী নবীন পাইলট পৃথুলা। বিমান পরিচালনায় আবিদ সুলতানের অভিজ্ঞতা পর্যাপ্ত হলেও সহকারী নবীন পাইলট পৃথুলার অভিজ্ঞতা সম্পর্কে সুস্পষ্ট কোন তথ্য পাওয়া যায়নি। তবে জানা যায় যে, পৃথুলার কাঠমান্ডুতে এটাই প্রথম ফ্লাইট ছিল।
ত্রিভুবন বিমানবন্দরঃ ২০/০২ পয়েন্ট নিয়ে বিভ্রান্তি: চলছে পাল্টাপাল্টি দোষারোপঃ
ত্রিভুবন আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরের এয়ার ট্রাফিক কন্ট্রোল (এটিসি) থেকে ইউএস-বাংলা এয়ারলাইন্সের বিএস২১১ এর পাইলটকে রানওয়ে নির্ধারণে তাদের দু’রকম নির্দেশনার আলাপ ছড়িয়ে পড়ার পর থেকে প্রশ্নের মুখে পড়েছেন কাঠমান্ডুর ত্রিভুবন আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরের এয়ার ট্রাফিক কন্ট্রোল (এটিসি), চলছে একে অপরকে দোষারোপের পালা। সেই সাথে বিমানটি ধ্বংসের ২৪ ঘন্টা অতিবাহিত হতে না হতেই এটিসির ছয় কর্মকর্তাকে বদলির বিষয়টি কারো নজর এড়ায়নি। মঙ্গলবারে দেয়া নেপালের ইংরেজি দৈনিক মাই রিপাবলিকা তাদের এক প্রতিবেদনে তথ্যটি নিশ্চিত করেছেন। এ নিয়ে প্রশ্ন তুলেছেন নেপালের সংবাদমাধ্যম ‘নেপাল টাইমস’ও। ইউএস বাংলা এয়ারলাইন্সের সিইও আসিফ ইমরান বলছেন, কাঠমান্ডু বিমানবন্দরের ট্রাফিক কন্ট্রোল টাওয়ারের গাফিলতির কারণেই এই দুর্ঘটনা ঘটেছে। তারা পাইলটকে ভুল বার্তা দিয়েছে। পাইলটদের সাথে ট্র্যাফিক কন্ট্রোলের (এটিসি) টাওয়ারের ল্যান্ডিংয়ের আগের কথোপকথন ছিলো রানওয়ের কোন দিক থেকে পাইলট ল্যান্ড করবেন। কথোপকথনে স্পষ্ট হয় যে তিন মিনিটের মধ্যে আমাদের পাইলটকে তারা বিভিন্ন বার্তা দেয়। ল্যান্ডিংয়ের ঠিক আগ মুহূর্তে বিভিন্ন বার্তা দিয়ে বিভ্রান্ত করার কারণেই এই দুর্ঘটনা হতে পারে বলে আমি মনে করছি। অন্যদিকে, নেপালে বিমান চলাচল কর্তৃপক্ষের মহাপরিচালক সঞ্জীব গৌতম বলেছেন, বিমানটিকে দক্ষিণ দিক থেকে নামার অনুমতি দেওয়া হয়েছিলো। কিন্তু এটি নামে বিমানবন্দরের উত্তর দিক থেকে, যার কারণেই এই দুর্ঘটনা ঘটে।
উল্লেখ্য যে, ২০১৬ সালে ত্রিভুবন বিমানবন্দরে আরো একটি বিমান দুর্ঘটনা ঘটে। ওই দুর্ঘটনায় ২৩ জন যাত্রীর সবাই মারা যায়। ওই ঘটনার মাত্র ২ বছরের মাথায় আবার ভয়াবহ আরেকটি বিমান দুর্ঘটনার ফলে বিমানবন্দরের কোন ত্রুটি রয়েছে কিনা তা নিয়ে প্রশ্ন দেখা দিয়েছে। নেপাল কর্তৃপক্ষ বিমানবন্দরে কোনো ত্রুটি আছে বলে এখনো স্বীকার করেনি। এদিকে বিমানে যান্ত্রিক কোনো ত্রুটি ছিল না বলে জানিয়েছে ইউএস বাংলা কর্তৃপক্ষ। তবে ২০১৬ সালের সেই বিমান দুর্ঘটনার পর, ২০১৬ সালের ২৮ মার্চ ‘দ্য হিমালয়ান টাইমস’ একটি প্রতিবেদন প্রকাশ করেন। ওই প্রতিবেদনে বলা হয়, ‘নেপালের ত্রিভুবন আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরের এটিসি টাওয়ার থেকে প্রায়ই ভুল বার্তা পান বলে দাবী করেন একাধিক পাইলট।’ ৫০টি মৃত্যুর দ্বায়ভার এড়াবেন কি করে এটিসি?
ত্রিভুবন আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরঃ
ত্রিভুবন একটি ঝুঁকিপূর্ণ বিমানবন্দর। এখানে গত বছরগুলোতে ২২টির বেশি দুর্ঘটনা ঘটে এবং ৫০০ এর বেশি মানুষ নিহত হন। সমুদ্রপৃষ্ঠ থেকে ৪ হাজার ৪০০ ফুট উচ্চতায় অবস্থিত ত্রিভুবন ইন্টারন্যাশনাল এয়ারপোর্ট বিপজ্জনক বিমানবন্দর হিসেবে পরিচিতি। উচু পাহাড় এবং ঘন কূয়াশা এই বিানবন্দরের প্রধান বাঁধা। ত্রিভুবন বিমানবন্দরের নয় মাইল দূরে রয়েছে একটি পাহাড় যা সমুদ্রপৃষ্ঠ থেকে ৮৭০০ ফুট উঁচুতে অবস্থিত। উচু পাহাড়ের কারণে কোন বিমান সরাসরি রানওয়েতে অবতরন করতে পারেনা। ওই পাহাড় পেরোনোর পরপরই বিমান পরিচালককে দ্রুত বিমান অবতরণ করাতে হয়। তাছাড়া অটোমেটিক ল্যান্ডিং সিস্টেম না থাকায় তিন কিলোমিটার দূর থেকে ত্রিভুবনের রানওয়ের দিকে লক্ষ রাখতে হয়। যেখানে প্রায়ই ঘন কূয়াশায় ঘিরে থাকে ত্রিভুবন বিমানবন্দর, সেখানে তিন কিলোমিটার দূর থেকে রানওয়ের দিকে লক্ষ্য রাখা কষ্টসাধ্য ব্যপার। তাছাড়া ২৫ হাজার ফুট উচ্চতার অসংখ্য পর্বত ঘিরে রয়েছে ত্রিভুবন বিমানবন্দরকে। সরাসরি অবতরণ করা ঝুকিপূর্ণ বলে বিমানটিকে আকাশ পথে ঘুরিয়ে ঘুরিয়ে সাড়ে ১১ হাজার ফুট ওপরে নিয়ে যেতে হয়। এবং তারপরই বিমান পরিচালক ঠিক করেনকোন দিক হতে তাঁর বিমানটিকে অবতরণ করবেন। উচু পাহাড়, বাতাস, কূয়াশা এবং ভৌগলিক অবস্থানের কারণে উত্তর দিক থেকে অবতরণের জন্য নামাটা ঝুঁকিপূর্ণ। সেকারণে ত্রিভূবন বিমানবন্দরে বেশিরভাগ ফ্লাইট নামে দক্ষিণ দিক থেকে।
ইউএস-বাংলার পাইলটের সাথে এটিসির শেষ ৪ মিনিটঃ
বিমানটি বিধ্বস্ত হওয়ার পর এটিসি থেকে ইউটিউবে ছড়িয়ে পড়া একটি অডিও কথোপকথনে শুনা যায় যে, বিএস ২১১ ফ্লাইটটি অবতরণের আগ মুহূর্তে এটিসি থেকে পাইলটকে বলা হচ্ছে, ‘আমি আবার বলছি, রানওয়ে ২০দিকে এগোবেন না।’
পাইলট বলেন, তিনি অপেক্ষা করছেন।
এরপর এটিসি সেটিকে অবতরণ না করে অপেক্ষা করতে বলেন। কারণ আরেকটি বিমান ওই রানওয়ের দিকে এগিয়ে আসছে। বিমানটি ডানদিকে ঘুরে গেলে এটিসি থেকে পাইলটের কাছে জানতে চাওয়া হয় তিনি কি রানওয়ে ০২(উত্তর দিক) দিয়ে বিমানটি নামাতে চান নাকি ২০(দক্ষিন দিক) দিয়ে নামাতে চান। তিনি বলেন তিনি রানওয়ে ২০(টু জিরো) ধরতে চান এবং তাকে অনুমতিও দেয়া হয়।কিন্তু ক্যাপ্টেন আবিদ ২০ (টু জিরো) দিক থেকে কিছু একটা ঝামেলা প্রত্যক্ষ করেন এবং সিদ্ধান্ত বদল করেন। তখন তাকে আবার জিজ্ঞেস করা হয়, আপনারা কি ২০(টু জিরো) দিয়ে নামবেন? ক্যাপ্টেন আবিদ জানান ”নেগেটিভ, স্যার”।অর্থাৎ না। এই অবস্থায় কন্ট্রোল রুম থেকে কেউ একজন বিষয়টা বুঝতে পেরে ক্যাপ্টেন আবিদকে ডান দিকে সরে যতে বলেন এবং আরো নিশ্চিত হওয়ার জন্যে বলেন যে, ‘নিশ্চয়ই আপনি এখন রানওয়ের পথে নন?’ ক্যাপ্টেন আবিদ কথা না বাড়িয়ে বললেন, ‘প্লিজ, রানওয়ে ক্লিয়ার করেন।’ পরক্ষনেই কন্ট্রোল রুম থেকে কেউ একজন জানালেন, ‘রানওয়ে ক্লিয়ার আছে এখন।’ কিন্তু এই ক্লিয়ারেন্সটা ছিল সম্ভবত পয়েন্ট ২০ (টু জিরো) এর দিক থেকে। কারণ, ২০(টু জিরো) পয়েন্ট দিয়েই পাইলট প্রথমে নামতে চেয়েছিলেন। ক্যাপ্টেন আবিদ বললেন, ‘আমরা কিন্তু নামছি ০২ পয়েন্ট দিয়ে’। আবারো কন্ট্রোল রুম থেকে বলা হল, ‘০২ পয়েন্টও ক্লিয়ার আছে, ল্যান্ড করুন।’ অনুমতি পেয়েই শেষ সময়ে ক্যাপ্টেন আবিদ রানওয়ে ০২ দিয়ে বিমানটি নামাতে ব্যস্ত হন। আর বিধ্বস্ত হয় বিমানটি।
কথোপকথনের ওই অডিও থেকে বোঝা যায়, ইউএস-বাংলার ফ্লাইটটি (বিএস ২১১) যখন বিমান বন্দরের কাছাকাছি পৌঁছায় তখন রানওয়ে ০২ পয়েন্টে আরেকটি বিমান ছিল। তখন ক্যাপ্টেন আবিদকে আকাশ পথে কিছুক্ষন অপেক্ষায় রাখা হয়। ল্যান্ডিং করার পথে একজন ক্যাপ্টেনকে হোল্ড করে রাখা, কতটা নিরাপদ? তবে কি এই দুর্ঘটনা ২০/০২ পয়েন্ট বিভ্রান্তির কারণে? ল্যান্ডিং এর আগ মুহূর্তে বিভ্রান্তিকর বার্তায় ক্যাপ্টেন আবিদ কি ক্লান্ত হয়ে পড়েছিলেন?
ক্যাপ্টেন আবিদের কন্ঠে ক্লান্তি কেনঃ
অডিও রেকর্ডিং কথোপকথনে ক্যাপ্টেন আবিদের কন্ঠে ক্লান্তি লক্ষ্যনীয়। তার এই ক্নান্তির কারন কি?
জানা যায় যে, ক্যাপ্টেন আবিদ ইউ এস বাংলার চাকুরী থেকে রিজাইন দিয়েছিলেন ১১ তারিখ রাত নয়টায়। কিন্তু পরদিন তাকে চট্টগ্রাম রুটে দুইবার, অর্থাৎ যাওয়া আসায় মোট চারবার ফ্লাইট পরিচালনা করানো হয়। অল্প সময়ের বিরতিতে চারবার ফ্লাইট পরিচালনা করানোর পরও যখন ইউ.এস.বাংলা কর্তৃপক্ষ ক্যাপ্টেন আবিদকে নেপালে ফ্লাই করতে বলেন, তখন আবিদ প্রথমে অস্বীকৃতি জানালেও পরে শেষ সময়ে ইউ.এস.বাংলা কর্তৃপক্ষকে বারতি বিড়ম্বনায় না ফেলার সিদ্ধান্ত নেন এবং তিনি আবারো ফ্লাই করতে রাজি হন। আইসিএরও নিয়ম অনুযায়ী একজন পাইলট দিনে ১১ ঘণ্টা ফ্লাইট পরিচালনা করতে পারেন। আবিদ সুলতানের ক্ষেত্রে সেটা মাত্রা ছাড়িয়ে গিয়েছিল। কাঠমান্ডুতে যেতে না চাইলেও ক্যাপ্টেইন আবিদকে মতের বিরুদ্ধে পাঠানোর কারণ- এখনো অস্পষ্ট।
ক্যাপ্টেন আবিদ সুলতানঃ
ক্যাপ্টেন আবিদ সুলতান তার সময়কালে সব থেকে ব্রাইট অফিসার হিসেবে পরিচিত ছিলেন। বিমান বাহিনীতে মিগ-২১ চালানোর অভিজ্ঞতাও রয়েছে তার। উক্ত এয়ারক্রাফটটি ক্যাপ্টেন আবিদ নিজে কানাডা থেকে বাংলাদেশে উড়িয়ে এনেছিলেন। অভিজ্ঞতার আলোকে আবিদ সুলতান ছিলেন একজন সাহসী বিমান পরিচালক। ৫ হাজার ঘণ্টা ফ্লাইট চালানোর অভিজ্ঞতা রয়েছে তার। তিনি ১৭০০ ঘণ্টা ধরে ড্যাশ ৮-কিউ৪০০ ও চালিয়েছেন।শতাধিকবার তিনি ত্রিভূবনে বিমান ওঠানামা করিয়েছেন। তাকে অনভিজ্ঞ কিছুতেই দাবী করা যায়না। তিনি ছিলেন একজন দক্ষ, সাহসী ও দায়ীত্ববান পাইলট।
ইউএস-বাংলার সময়কালীন সফরঃ
উল্লেখ্য যে, ইউএস বাংলার এটিই প্রথম দূর্ঘটনা নয়, জ্যাকডেকের তথ্য অনুযায়ী, ইউএস-বাংলার এটি তৃতীয় দুর্ঘটনা। কিছুদিন আগে চট্টগ্রাম বিমানবন্দরে অবতরণের আগে ল্যান্ডিং গিয়ারে সমস্যা দেখা দেয় তাদের একটি বিমানের। তারপর আকাশপথে কিছুক্ষন চক্কর দিয়ে ঝুঁকিপূর্ণ অবতরণ করে তাদের একটি উড়োজাহাজ। সম্প্রতি সৈয়দপুর ও যশোর থেকে ঢাকা আসা পৃথক দুটি ফ্লাইটে একটি করে ইঞ্জিন বন্ধ হয়ে যায়। এক ইঞ্জিন দিয়ে বিমান চালিয়ে কোনরকম ঢাকায় অবতরণ করা হয়।
বাণিজ্যিকভাবে যাত্রা শুরু করার চার বছরের মধ্যে তিনটি দুর্ঘটনা ঘটিয়ে ফেলার পেছনে ইউএস-বাংলার কোনো গাফিলতি রয়েছে কিনা, সেটি খতিয়ে দেখার বিষয়।
জনমনে প্রশ্নঃ
অডিও কথোপকথনে আরো একটি বিষয় লক্ষ্যনীয়, কন্ট্রোল রুমের সঙ্গে প্রথম সহকারী পাইলট কথা বললেও অবতরণের আগ মুহূর্তে ক্যাপ্টেন আবিদকে নিজে কথা বলতে শুনা যায়। আন্তর্জাতিক নিয়ন্ত্রক সংস্থা আইসিএও-র নিয়ম অনুযায়ী, যিনি বিমান পরিচালনা করবেন,নিরাপত্তার স্বার্থে তিনি কন্ট্রোল টাওয়ারের সঙ্গে কথোপকথন চালাতে পারবেন না। কথোপকথন চালাবেন সহকারী পাইলট। তাহলে পাইলট আবিদের নিয়ন্ত্রণ কক্ষের সঙ্গে কথা বলা মানে কি? তবে কি তিনি বিমানটি পরিচালনা করছিলেন না,? সহকারী পাইলট পৃথুলা বিমানটি পরিচালনা করছিলেন? নাকি পাইলট নিজে বিমানও পরিচালনা করছিলেন, আবার কথাও বলছিলেন? উভয় ক্ষেত্রেই মনোযোগ হারানো এবং দূর্ঘটনা ঘটা অবশ্যম্ভাবী। আর যদি তাই হয়ে থাকে, তবে এর জন্য দায়ী কে? ল্যান্ডিংয়ের আগ মুহূর্তে নেপাল কন্ট্রোল রুমের কর্মকর্তাদের বিভিন্ন বিভ্রান্তিমূলক বার্তা প্রেরণ ও আকাশ পথে ক্যাপ্টেইন আবিদকে অপেক্ষায় রাখা, আইসিএও-র নিয়ম ভেঙ্গে ইউ এস বাংলার বিরতিহীন তাকে দিয়ে ফ্লাইট পরিচালনা করানো,
দুর্ঘটনার ২৪ ঘন্টার মধ্যে নেপাল কন্ট্রোল রুমের দায়ীত্বে থাকা ৬ জনকে অন্যত্র বদলী করে দেয়া…. একটি বিশাল রহস্যকে আড়াল করার চেষ্টা কি?
নেপাল কন্ট্রোল রুম কর্তৃপক্ষ এবং ইউ.এস.বাংলা উভয়পক্ষের চূড়ান্ত গাফিলতির কারণে আজ প্রান গেল অর্ধশতাধিক নিরিহ যাত্রীর। উভয় পক্ষই অপরাধ করেছে দুর্ঘটনায় নিহত প্রতিটি নিরিহ প্রাণের সাথে, ক্যাপ্টেন আবিদ ও পৃথুলার সাথে।
ক্যাপ্টেন আবিদ-আমাদের গর্ব। পৃথুলা-আমাদের গর্ব। বিমান দুর্ঘটনায় নিহত ক্যাপ্টেন,ক্রু ও প্রতিটি যাত্রীর রুহের মাগফেরাত কামনা করছি। সেই সাথে প্রকৃত অপরাধীর দৃষ্টান্তমূলক শাস্তি দাবী করছি।
HB Rita
কাঠমুন্ডুতে ভয়াবহ বিমান দুর্ঘটনা
বাংলাদেশ স্থানীয় সময় সোমবার(১২ মার্চ,২০১৮) দুপুর ৩:২০ মিনিটে কাঠমান্ডুর ত্রিভুবন বিমানবন্দরে অবতরণের সময়, টার্বোপ্রপ ইঞ্জিনচালিত ইউএস-বাংলার ড্যাশ ৮-কিউ৪০০ এয়ারক্রাফ্টটি (ফ্লাইট বিএস ২১১) হঠাৎ রানওয়ে বদলে এয়ারপোর্টের একটি ফুটবল মাঠে ছিটকে পড়ে। মুহূর্তেই আগুন ধরে যায় বিমানটিতে। নেপালের কাঠমাণ্ডুতে ভয়াবহ বিমান দূর্ঘটনায় এখন পর্যন্ত ৫০ জনের মৃত্যুর খবর পাওয়া গেছে। এর মধ্যে ১৩ জন নেপালের মেডিক্যাল শিক্ষার্থী।
নেপালের কাঠমান্ডুতে ইউএস-বাংলা এয়ারলাইন্সের বিধ্বস্ত বিমানটিতে ৪ জন ক্রু এবং ৬৭ জন যাত্রী অর্থাৎ মোট ৭১ জন ছিলেন।এর মধ্যে চার ক্রুসহ ৩৬ জন বাংলাদেশি ছিলেন।৩৬ জন বাংলাদেশির ২৬ জনই বিমান দূর্ঘটনায় নিহত হয়েছেন। বাকিরা কাঠমান্ডুর বিভিন্ন হাসপাতালে চিকিৎসাধীন রয়েছেন। চিকিৎসাধীনদের একেক জনের অবস্থা একেক রকম। কারো ব্যাপারে নির্দিষ্ট করে কিছু বলা যাচ্ছেনা। পরিস্থিতি পর্যবেক্ষণে ১৩ মার্চ নেপালে গিয়েছিলেন বাংলাদেশ বিমানমন্ত্রী। শুক্রবার দেশে ফিরে এসে তিনি জানান, ‘আমাকে নেপাল কর্তৃপক্ষ আটজনের লাশ দেখিয়েছে। বাকি ১৮ জনের লাশ বস্তাবন্দি। দেখে চেনার উপায় নেই। বস্তায় পোড়া মানুষের ছাই। ডিএনএ টেস্ট ছাড়া শনাক্তের উপায় নেই।’
ইউএস-বাংলার যাত্রাঃ
মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র এবং বাংলাদেশের যৌথ উদ্যোগে প্রতিষ্ঠিত ইউএস-বাংলা বাংলাদেশের একটি বেসরকারি বিমান সংস্থা। গত ১৭ই জুলাই ২০১৪তে চট্রগ্রাম ও যশোর ফ্লাইট দিয়ে যাত্রা শুরু করেন ইউএস-বাংলা এয়ারলাইন্স।ইউএস-বাংলা এয়ারলাইন্স এর বহরে রয়েছে পৃথিবীর সর্বাধুনিক DASH-8-Q400 এর দুইটি Turboprop এয়ারক্রাফট। ইউএস-বাংলার ড্যাশ ৮-কিউ৪০০ এয়ারক্রাফটটি পরিচালনা করছিলেন ক্যাপ্টেন আবিদ সুলতান এবং তার সহকারী নবীন পাইলট পৃথুলা। বিমান পরিচালনায় আবিদ সুলতানের অভিজ্ঞতা পর্যাপ্ত হলেও সহকারী নবীন পাইলট পৃথুলার অভিজ্ঞতা সম্পর্কে সুস্পষ্ট কোন তথ্য পাওয়া যায়নি। তবে জানা যায় যে, পৃথুলার কাঠমান্ডুতে এটাই প্রথম ফ্লাইট ছিল।
ত্রিভুবন বিমানবন্দরঃ ২০/০২ পয়েন্ট নিয়ে বিভ্রান্তি: চলছে পাল্টাপাল্টি দোষারোপঃ
ত্রিভুবন আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরের এয়ার ট্রাফিক কন্ট্রোল (এটিসি) থেকে ইউএস-বাংলা এয়ারলাইন্সের বিএস২১১ এর পাইলটকে রানওয়ে নির্ধারণে তাদের দু’রকম নির্দেশনার আলাপ ছড়িয়ে পড়ার পর থেকে প্রশ্নের মুখে পড়েছেন কাঠমান্ডুর ত্রিভুবন আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরের এয়ার ট্রাফিক কন্ট্রোল (এটিসি), চলছে একে অপরকে দোষারোপের পালা। সেই সাথে বিমানটি ধ্বংসের ২৪ ঘন্টা অতিবাহিত হতে না হতেই এটিসির ছয় কর্মকর্তাকে বদলির বিষয়টি কারো নজর এড়ায়নি। মঙ্গলবারে দেয়া নেপালের ইংরেজি দৈনিক মাই রিপাবলিকা তাদের এক প্রতিবেদনে তথ্যটি নিশ্চিত করেছেন। এ নিয়ে প্রশ্ন তুলেছেন নেপালের সংবাদমাধ্যম ‘নেপাল টাইমস’ও। ইউএস বাংলা এয়ারলাইন্সের সিইও আসিফ ইমরান বলছেন, কাঠমান্ডু বিমানবন্দরের ট্রাফিক কন্ট্রোল টাওয়ারের গাফিলতির কারণেই এই দুর্ঘটনা ঘটেছে। তারা পাইলটকে ভুল বার্তা দিয়েছে। পাইলটদের সাথে ট্র্যাফিক কন্ট্রোলের (এটিসি) টাওয়ারের ল্যান্ডিংয়ের আগের কথোপকথন ছিলো রানওয়ের কোন দিক থেকে পাইলট ল্যান্ড করবেন। কথোপকথনে স্পষ্ট হয় যে তিন মিনিটের মধ্যে আমাদের পাইলটকে তারা বিভিন্ন বার্তা দেয়। ল্যান্ডিংয়ের ঠিক আগ মুহূর্তে বিভিন্ন বার্তা দিয়ে বিভ্রান্ত করার কারণেই এই দুর্ঘটনা হতে পারে বলে আমি মনে করছি। অন্যদিকে, নেপালে বিমান চলাচল কর্তৃপক্ষের মহাপরিচালক সঞ্জীব গৌতম বলেছেন, বিমানটিকে দক্ষিণ দিক থেকে নামার অনুমতি দেওয়া হয়েছিলো। কিন্তু এটি নামে বিমানবন্দরের উত্তর দিক থেকে, যার কারণেই এই দুর্ঘটনা ঘটে।
উল্লেখ্য যে, ২০১৬ সালে ত্রিভুবন বিমানবন্দরে আরো একটি বিমান দুর্ঘটনা ঘটে। ওই দুর্ঘটনায় ২৩ জন যাত্রীর সবাই মারা যায়। ওই ঘটনার মাত্র ২ বছরের মাথায় আবার ভয়াবহ আরেকটি বিমান দুর্ঘটনার ফলে বিমানবন্দরের কোন ত্রুটি রয়েছে কিনা তা নিয়ে প্রশ্ন দেখা দিয়েছে। নেপাল কর্তৃপক্ষ বিমানবন্দরে কোনো ত্রুটি আছে বলে এখনো স্বীকার করেনি। এদিকে বিমানে যান্ত্রিক কোনো ত্রুটি ছিল না বলে জানিয়েছে ইউএস বাংলা কর্তৃপক্ষ। তবে ২০১৬ সালের সেই বিমান দুর্ঘটনার পর, ২০১৬ সালের ২৮ মার্চ ‘দ্য হিমালয়ান টাইমস’ একটি প্রতিবেদন প্রকাশ করেন। ওই প্রতিবেদনে বলা হয়, ‘নেপালের ত্রিভুবন আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরের এটিসি টাওয়ার থেকে প্রায়ই ভুল বার্তা পান বলে দাবী করেন একাধিক পাইলট।’ ৫০টি মৃত্যুর দ্বায়ভার এড়াবেন কি করে এটিসি?
ত্রিভুবন আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরঃ
ত্রিভুবন একটি ঝুঁকিপূর্ণ বিমানবন্দর। এখানে গত বছরগুলোতে ২২টির বেশি দুর্ঘটনা ঘটে এবং ৫০০ এর বেশি মানুষ নিহত হন। সমুদ্রপৃষ্ঠ থেকে ৪ হাজার ৪০০ ফুট উচ্চতায় অবস্থিত ত্রিভুবন ইন্টারন্যাশনাল এয়ারপোর্ট বিপজ্জনক বিমানবন্দর হিসেবে পরিচিতি। উচু পাহাড় এবং ঘন কূয়াশা এই বিানবন্দরের প্রধান বাঁধা। ত্রিভুবন বিমানবন্দরের নয় মাইল দূরে রয়েছে একটি পাহাড় যা সমুদ্রপৃষ্ঠ থেকে ৮৭০০ ফুট উঁচুতে অবস্থিত। উচু পাহাড়ের কারণে কোন বিমান সরাসরি রানওয়েতে অবতরন করতে পারেনা। ওই পাহাড় পেরোনোর পরপরই বিমান পরিচালককে দ্রুত বিমান অবতরণ করাতে হয়। তাছাড়া অটোমেটিক ল্যান্ডিং সিস্টেম না থাকায় তিন কিলোমিটার দূর থেকে ত্রিভুবনের রানওয়ের দিকে লক্ষ রাখতে হয়। যেখানে প্রায়ই ঘন কূয়াশায় ঘিরে থাকে ত্রিভুবন বিমানবন্দর, সেখানে তিন কিলোমিটার দূর থেকে রানওয়ের দিকে লক্ষ্য রাখা কষ্টসাধ্য ব্যপার। তাছাড়া ২৫ হাজার ফুট উচ্চতার অসংখ্য পর্বত ঘিরে রয়েছে ত্রিভুবন বিমানবন্দরকে। সরাসরি অবতরণ করা ঝুকিপূর্ণ বলে বিমানটিকে আকাশ পথে ঘুরিয়ে ঘুরিয়ে সাড়ে ১১ হাজার ফুট ওপরে নিয়ে যেতে হয়। এবং তারপরই বিমান পরিচালক ঠিক করেনকোন দিক হতে তাঁর বিমানটিকে অবতরণ করবেন। উচু পাহাড়, বাতাস, কূয়াশা এবং ভৌগলিক অবস্থানের কারণে উত্তর দিক থেকে অবতরণের জন্য নামাটা ঝুঁকিপূর্ণ। সেকারণে ত্রিভূবন বিমানবন্দরে বেশিরভাগ ফ্লাইট নামে দক্ষিণ দিক থেকে।
ইউএস-বাংলার পাইলটের সাথে এটিসির শেষ ৪ মিনিটঃ
বিমানটি বিধ্বস্ত হওয়ার পর এটিসি থেকে ইউটিউবে ছড়িয়ে পড়া একটি অডিও কথোপকথনে শুনা যায় যে, বিএস ২১১ ফ্লাইটটি অবতরণের আগ মুহূর্তে এটিসি থেকে পাইলটকে বলা হচ্ছে, ‘আমি আবার বলছি, রানওয়ে ২০দিকে এগোবেন না।’
পাইলট বলেন, তিনি অপেক্ষা করছেন।
এরপর এটিসি সেটিকে অবতরণ না করে অপেক্ষা করতে বলেন। কারণ আরেকটি বিমান ওই রানওয়ের দিকে এগিয়ে আসছে। বিমানটি ডানদিকে ঘুরে গেলে এটিসি থেকে পাইলটের কাছে জানতে চাওয়া হয় তিনি কি রানওয়ে ০২(উত্তর দিক) দিয়ে বিমানটি নামাতে চান নাকি ২০(দক্ষিন দিক) দিয়ে নামাতে চান। তিনি বলেন তিনি রানওয়ে ২০(টু জিরো) ধরতে চান এবং তাকে অনুমতিও দেয়া হয়।কিন্তু ক্যাপ্টেন আবিদ ২০ (টু জিরো) দিক থেকে কিছু একটা ঝামেলা প্রত্যক্ষ করেন এবং সিদ্ধান্ত বদল করেন। তখন তাকে আবার জিজ্ঞেস করা হয়, আপনারা কি ২০(টু জিরো) দিয়ে নামবেন? ক্যাপ্টেন আবিদ জানান ”নেগেটিভ, স্যার”।অর্থাৎ না। এই অবস্থায় কন্ট্রোল রুম থেকে কেউ একজন বিষয়টা বুঝতে পেরে ক্যাপ্টেন আবিদকে ডান দিকে সরে যতে বলেন এবং আরো নিশ্চিত হওয়ার জন্যে বলেন যে, ‘নিশ্চয়ই আপনি এখন রানওয়ের পথে নন?’ ক্যাপ্টেন আবিদ কথা না বাড়িয়ে বললেন, ‘প্লিজ, রানওয়ে ক্লিয়ার করেন।’ পরক্ষনেই কন্ট্রোল রুম থেকে কেউ একজন জানালেন, ‘রানওয়ে ক্লিয়ার আছে এখন।’ কিন্তু এই ক্লিয়ারেন্সটা ছিল সম্ভবত পয়েন্ট ২০ (টু জিরো) এর দিক থেকে। কারণ, ২০(টু জিরো) পয়েন্ট দিয়েই পাইলট প্রথমে নামতে চেয়েছিলেন। ক্যাপ্টেন আবিদ বললেন, ‘আমরা কিন্তু নামছি ০২ পয়েন্ট দিয়ে’। আবারো কন্ট্রোল রুম থেকে বলা হল, ‘০২ পয়েন্টও ক্লিয়ার আছে, ল্যান্ড করুন।’ অনুমতি পেয়েই শেষ সময়ে ক্যাপ্টেন আবিদ রানওয়ে ০২ দিয়ে বিমানটি নামাতে ব্যস্ত হন। আর বিধ্বস্ত হয় বিমানটি।
কথোপকথনের ওই অডিও থেকে বোঝা যায়, ইউএস-বাংলার ফ্লাইটটি (বিএস ২১১) যখন বিমান বন্দরের কাছাকাছি পৌঁছায় তখন রানওয়ে ০২ পয়েন্টে আরেকটি বিমান ছিল। তখন ক্যাপ্টেন আবিদকে আকাশ পথে কিছুক্ষন অপেক্ষায় রাখা হয়। ল্যান্ডিং করার পথে একজন ক্যাপ্টেনকে হোল্ড করে রাখা, কতটা নিরাপদ? তবে কি এই দুর্ঘটনা ২০/০২ পয়েন্ট বিভ্রান্তির কারণে? ল্যান্ডিং এর আগ মুহূর্তে বিভ্রান্তিকর বার্তায় ক্যাপ্টেন আবিদ কি ক্লান্ত হয়ে পড়েছিলেন?
ক্যাপ্টেন আবিদের কন্ঠে ক্লান্তি কেনঃ
অডিও রেকর্ডিং কথোপকথনে ক্যাপ্টেন আবিদের কন্ঠে ক্লান্তি লক্ষ্যনীয়। তার এই ক্নান্তির কারন কি?
জানা যায় যে, ক্যাপ্টেন আবিদ ইউ এস বাংলার চাকুরী থেকে রিজাইন দিয়েছিলেন ১১ তারিখ রাত নয়টায়। কিন্তু পরদিন তাকে চট্টগ্রাম রুটে দুইবার, অর্থাৎ যাওয়া আসায় মোট চারবার ফ্লাইট পরিচালনা করানো হয়। অল্প সময়ের বিরতিতে চারবার ফ্লাইট পরিচালনা করানোর পরও যখন ইউ.এস.বাংলা কর্তৃপক্ষ ক্যাপ্টেন আবিদকে নেপালে ফ্লাই করতে বলেন, তখন আবিদ প্রথমে অস্বীকৃতি জানালেও পরে শেষ সময়ে ইউ.এস.বাংলা কর্তৃপক্ষকে বারতি বিড়ম্বনায় না ফেলার সিদ্ধান্ত নেন এবং তিনি আবারো ফ্লাই করতে রাজি হন। আইসিএরও নিয়ম অনুযায়ী একজন পাইলট দিনে ১১ ঘণ্টা ফ্লাইট পরিচালনা করতে পারেন। আবিদ সুলতানের ক্ষেত্রে সেটা মাত্রা ছাড়িয়ে গিয়েছিল। কাঠমান্ডুতে যেতে না চাইলেও ক্যাপ্টেইন আবিদকে মতের বিরুদ্ধে পাঠানোর কারণ- এখনো অস্পষ্ট।
ক্যাপ্টেন আবিদ সুলতানঃ
ক্যাপ্টেন আবিদ সুলতান তার সময়কালে সব থেকে ব্রাইট অফিসার হিসেবে পরিচিত ছিলেন। বিমান বাহিনীতে মিগ-২১ চালানোর অভিজ্ঞতাও রয়েছে তার। উক্ত এয়ারক্রাফটটি ক্যাপ্টেন আবিদ নিজে কানাডা থেকে বাংলাদেশে উড়িয়ে এনেছিলেন। অভিজ্ঞতার আলোকে আবিদ সুলতান ছিলেন একজন সাহসী বিমান পরিচালক। ৫ হাজার ঘণ্টা ফ্লাইট চালানোর অভিজ্ঞতা রয়েছে তার। তিনি ১৭০০ ঘণ্টা ধরে ড্যাশ ৮-কিউ৪০০ ও চালিয়েছেন।শতাধিকবার তিনি ত্রিভূবনে বিমান ওঠানামা করিয়েছেন। তাকে অনভিজ্ঞ কিছুতেই দাবী করা যায়না। তিনি ছিলেন একজন দক্ষ, সাহসী ও দায়ীত্ববান পাইলট।
ইউএস-বাংলার সময়কালীন সফরঃ
উল্লেখ্য যে, ইউএস বাংলার এটিই প্রথম দূর্ঘটনা নয়, জ্যাকডেকের তথ্য অনুযায়ী, ইউএস-বাংলার এটি তৃতীয় দুর্ঘটনা। কিছুদিন আগে চট্টগ্রাম বিমানবন্দরে অবতরণের আগে ল্যান্ডিং গিয়ারে সমস্যা দেখা দেয় তাদের একটি বিমানের। তারপর আকাশপথে কিছুক্ষন চক্কর দিয়ে ঝুঁকিপূর্ণ অবতরণ করে তাদের একটি উড়োজাহাজ। সম্প্রতি সৈয়দপুর ও যশোর থেকে ঢাকা আসা পৃথক দুটি ফ্লাইটে একটি করে ইঞ্জিন বন্ধ হয়ে যায়। এক ইঞ্জিন দিয়ে বিমান চালিয়ে কোনরকম ঢাকায় অবতরণ করা হয়।
বাণিজ্যিকভাবে যাত্রা শুরু করার চার বছরের মধ্যে তিনটি দুর্ঘটনা ঘটিয়ে ফেলার পেছনে ইউএস-বাংলার কোনো গাফিলতি রয়েছে কিনা, সেটি খতিয়ে দেখার বিষয়।
জনমনে প্রশ্নঃ
অডিও কথোপকথনে আরো একটি বিষয় লক্ষ্যনীয়, কন্ট্রোল রুমের সঙ্গে প্রথম সহকারী পাইলট কথা বললেও অবতরণের আগ মুহূর্তে ক্যাপ্টেন আবিদকে নিজে কথা বলতে শুনা যায়। আন্তর্জাতিক নিয়ন্ত্রক সংস্থা আইসিএও-র নিয়ম অনুযায়ী, যিনি বিমান পরিচালনা করবেন,নিরাপত্তার স্বার্থে তিনি কন্ট্রোল টাওয়ারের সঙ্গে কথোপকথন চালাতে পারবেন না। কথোপকথন চালাবেন সহকারী পাইলট। তাহলে পাইলট আবিদের নিয়ন্ত্রণ কক্ষের সঙ্গে কথা বলা মানে কি? তবে কি তিনি বিমানটি পরিচালনা করছিলেন না,? সহকারী পাইলট পৃথুলা বিমানটি পরিচালনা করছিলেন? নাকি পাইলট নিজে বিমানও পরিচালনা করছিলেন, আবার কথাও বলছিলেন? উভয় ক্ষেত্রেই মনোযোগ হারানো এবং দূর্ঘটনা ঘটা অবশ্যম্ভাবী। আর যদি তাই হয়ে থাকে, তবে এর জন্য দায়ী কে? ল্যান্ডিংয়ের আগ মুহূর্তে নেপাল কন্ট্রোল রুমের কর্মকর্তাদের বিভিন্ন বিভ্রান্তিমূলক বার্তা প্রেরণ ও আকাশ পথে ক্যাপ্টেইন আবিদকে অপেক্ষায় রাখা, আইসিএও-র নিয়ম ভেঙ্গে ইউ এস বাংলার বিরতিহীন তাকে দিয়ে ফ্লাইট পরিচালনা করানো,
দুর্ঘটনার ২৪ ঘন্টার মধ্যে নেপাল কন্ট্রোল রুমের দায়ীত্বে থাকা ৬ জনকে অন্যত্র বদলী করে দেয়া…. একটি বিশাল রহস্যকে আড়াল করার চেষ্টা কি?
নেপাল কন্ট্রোল রুম কর্তৃপক্ষ এবং ইউ.এস.বাংলা উভয়পক্ষের চূড়ান্ত গাফিলতির কারণে আজ প্রান গেল অর্ধশতাধিক নিরিহ যাত্রীর। উভয় পক্ষই অপরাধ করেছে দুর্ঘটনায় নিহত প্রতিটি নিরিহ প্রাণের সাথে, ক্যাপ্টেন আবিদ ও পৃথুলার সাথে।
ক্যাপ্টেন আবিদ-আমাদের গর্ব। পৃথুলা-আমাদের গর্ব। বিমান দুর্ঘটনায় নিহত ক্যাপ্টেন,ক্রু ও প্রতিটি যাত্রীর রুহের মাগফেরাত কামনা করছি। সেই সাথে প্রকৃত অপরাধীর দৃষ্টান্তমূলক শাস্তি দাবী করছি।
HB Rita
Published by HB Rita on Friday, March 16th, 2018