ইলিউশন বনাম ডিলিউশন বনাম হ্যালুসিনেশন

screenshot_2

আমাদের দৈনন্দিন জীবনে, অনেক কিছু ঘটে যার নির্দিষ্ট ব্যাখ্যা আমাদের কাছে থাকেনা। কিছুটা রহস্যে ঘেরা, বিভ্রান্তিমূলক, আবার দৃঢ় সত্য উপস্থিতি কিন্তু ঘোলাটে… সব মিলিয়ে একটা বিভ্রম পরিস্থিতি যা আপনি বুজছেন, আপনি দেখছেন বা শুনছেন, টের পাচ্ছেন কিন্তু অন্যরা পাচ্ছেন না। তবে কি আপনি পাগল?
অবশ্যয়ই না। আপনি পাগল নন! এটা একটা মানসিক স্তর বিন্যাস যেখানে প্রতিনিয়ত আপনি বিভ্রমের শিকার।
তেমনি কিছু টার্ম্স নিয়ে আমি আলোচনা করবো আজ। আলোচনা শেষে ১টি কুইজ দেয়া হবে, তা পুরণ করবেন।
 
 
***************
অনেকেই হ্যালোসিনেশন সম্পর্কে জানেন। তবে ইলিউশন এবং ডিলিউশন সম্পর্কে অনেকেই স্পষ্ট ধারনা রাখেন না। যদিও তিনটি টার্মসই ঘুরেফিরে বিভ্রমের জন্ম দেয়, কিন্তু বুজতে হবে, তাদের অবস্থান ও উপস্থিতি ভিন্ন।
ডিলিউশন হচ্ছে মানুষের এমন এক অভ্যন্তরীণ শক্তিশালী বিশ্বাস, যার বস্তুত কোন বাস্তবিক উপস্থিতি নেই। সন্দেহপ্রবনতা এবং অনুমান করা হচ্ছে মানুষের মেইজর ডিলিউশন।
আর হ্যালুসিনেশন হচ্ছে মানুষের এমন এক অভ্যন্তরীণ শক্তিশালী বিশ্বাস, যার বাস্তবিক উপস্থিতি না থাকা সত্বেও কারো মনে হতে পারে আছে এবং সে পরিষ্কারভাবে সে উপস্থিতি টের পাবে যা অন্যে পাবেনা।
আবার ইলিউশন হচ্ছে মানুষের মনের এমন এক বিভ্রম, যা মূলত ভ্রান্ত ধারনা হিসাবে বিবেচিত অর্থাৎ কৌশল দ্বারা প্রতারিত হওয়া বা কোন অবস্থান ও উপস্থিতির ভুল ব্যাখা করাকে ইলিউশন বলে।
 
কিছু উদাহরন দিচ্ছি।
ইলিউশনঃ যেমন-
– যাদুর মাধ্যমে কোন ব্যাক্তিকে হঠাৎ গায়েব করে দেয়া হচ্ছে ইলিউশন।
– ছায়া দেখে তাকে ভুত-প্রেত বা কোন বস্তুর আকৃতি ভাবা
– বিশ্বাস করা যেমন অর্থে সুখ আসে
– আয়নায় তাকালে ছোট জায়গা কে বড় মনে হওয়া
– দুর হতে কারো হাঁটার ভঙ্গি বা চুল দেখে তাকে হুবহু পরিচিত কারো মত মনে হওয়া।
ইলিউশন মূলত আমাদের চোখকে ফাঁকি দেয়। ইলিউশনের কিছু প্রকারভেদ রয়েছে। যেমন- অডিটরি, ভিজুয়েল, ট্যাক্টাইল, টেম্পোরাল ইত্যাদি।
 
ডিলিউশনঃ যেমন-
– প্রমান ছাড়াই অন্যকে সব সময় সন্দেহের চোখে দেখা
– কারো ঠোট নড়তে দেখা মাত্রই অনুমান করে নেয়া যে অপর ব্যাক্তি কি বলছেন
– জীবনসঙ্গীকে অহেতুক অন্য কারো সাথে প্রণয় আছে বলে দৃঢ়ভাবে বিশ্বাস করা
– নিজের কোন দুর্ঘটনার জন্য অতীতের কোন কর্ম দায়ী বলে ভাবা
-নিজেকে খুব সুপেরিওর কিছু ভাবা বস্তুত যার কোন উপস্থিতি নেই
-কেউ তাকে অনুসরণ বা স্পাইয়িং করছে ভাবা।
অনেক ধরনের ডিলিউশনাল ডিসর্ডার রয়েছে। যেমনঃ পার্সিকিউটরি ডিলিউশন, ডিলিউশন অফ গ্র্যান্ডিয়র, ডি লিউশনাল জেলাসি, এরোটোমেনিয়া অর ডিলিউশন অফ লাভ, সোম্যাটিক ডিলিউশনাল ডিসর্ডার, ইন্ডিউস ডিলিউশনাল ডিসর্ডার, ব্যাযার ডিলিউশন, নন-ব্যাযার ডিলিউশন, মুড কনগ্রুয়েন্ট ডিলিউশন এবং মুড নিউট্রাল ডিলিউশন।
 
হ্যালুসিনেশনঃ যেমন-
– অলৌকিক কিছুর উপস্থিতি টের পাওয়া
– ভৌতিক শব্দ শোনা
– ওযৌক্তিক গন্ধ পাওয়া
-মৃত মানুষের সাথে কথা
– অলৌকিক কারো উপস্থিতি তাকে কিছু করতে বাধ্য করা। যেমন- হ্যালুসিনেশনে ভোগে এমন অনেকেই শুনেন যে তাকে কেউ মরে যেতে বলছেন এবং অনেকে তারই পরিপ্রেক্ষিতে আত্মহত্যার ও চেষ্টা করেন। হ্যালুসিনেশন কয়েক ধরনের হতে পারে। যেমনঃ ভিজুয়েল হ্যালুসিনেশন, অডিটরি হ্যালুসিনেশন, ট্যাক্টাইল হ্যালুসিনেশন, অলফ্যাক্টোরি হ্যালুসিনেশন, জ্যাস্টাটরি হ্যালুসিনেশন, জেনেরাল সোমেটিক হ্যালুসিনেশন।
 
আরো সহজ ভাষায় বলতে গেলে, ধরুন আপনার স্বামী/স্ত্রী বিভোর ঘুমে আচ্ছন্ন। কিন্তু আপনি দেখছেন যে তিনি ঘুমুচ্ছেন না, তিনি কারো সাথে কথা বলছেন। হতে পারে সেটা ফোনে বা ফিজিক্যালি। এটাই হ্যালুসিনেশন।
আবার ধরুন আপনার স্বামী/স্ত্রী পরিচিত কারো সাথে সালাম বিনিময় করছেন হাসি মুখে। তা দেখে আপনার মনে হলো, তিনি আসলে সালাম বিনিময় করছেন না, তিনি নিশ্চয়ই ওই ব্যাক্তির সাথে অবৈধ সম্পর্কে জড়িত। নয়তো তিনি হাসলেন কেন? হচ্ছে ইলিউশন।
আর যদি কোন বাস্তবিক উপস্থিতি ছাড়াই আপনার মনে হতে থাকে যে আপনার স্বামী/স্ত্রী নিশ্চয়ই আপনার অগোচরে কারো সাথে অনৈতিক সম্পর্কে জড়িত, তাহলে সেটা ডিলিউশন।
 
 
উপসর্গ যাই হোক, উপরোক্ত তিনটি সমস্যাই প্রাথমিক পর্যায়ে সারিয়ে তোলা তেমন কঠিন কিছু নয়। যখনই আপনি নিজে কিংবা পরিবার-আশেপাশের কারো মাঝে উপরোক্ত কোন একটির লক্ষন অনুধাবন করবেন, সাথে সাথে ডাক্তারের পরামর্শ নিবেন। মনোরোগ বিশেষজ্ঞের শরনাপন্ন হবেন।
ডার্ক এভিল